বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন

নবীযুগে যাঁরা আল্লাহর ওহি লিখতেন

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫
মহানবী (সা.) শিক্ষা বিস্তারে ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী। তাঁর শিক্ষাবান্ধব নীতির ফলেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে লেখালেখিতে পারদর্শী সাহাবিদের একটি দল গড়ে ওঠে। এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবদ্দশায় যাঁরা ওহি লিপিবদ্ধ করতেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের কোটায় পৌঁছে গিয়েছিল।তাঁদের কেউ কেউ নির্দিষ্ট সময় বা বিশেষ পরিস্থিতিতে লিখতেন, আবার কেউ কেউ পুরোপুরিভাবে এই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং লেখালেখিতে বিশেষ পারদর্শিতাও অর্জন করেছিলেন।তাঁরা ছিলেন রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম। খেজুরগাছের শুকনা ডাল, চ্যাপ্টা পাথর, চামড়ার টুকরা কিংবা হাড়ের পাতের মতো উপকরণে ওহি লিখে রাখতেন। পরবর্তী সময়ে কাগজের ব্যবহার শুরু হলে কাগজ ও হাড়ে লেখা ওহির পাণ্ডুলিপিগুলো অত্যন্ত যত্নসহ রাসুল (সা.)-এর ঘরে সংরক্ষিত রাখা হতো। যখনই কোনো নতুন আয়াত অবতীর্ণ হতো, নবীজি (সা.) সঙ্গে সঙ্গেই তা তাঁর বিশ্বস্ত সাহাবিদের লিখে রাখার নির্দেশ দিতেন।তিনি স্পষ্ট বলতেন, ‘এই আয়াতগুলো সেই সুরার নির্দিষ্ট স্থানে লিখে রাখো, যেখানে অমুক অমুক বিষয় পূর্বে উল্লেখ আছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৮৬ )এ ছিল আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে সতর্কতা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের। এই সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পদ্ধতির মাধ্যমেই কোরআন ধাপে ধাপে সংকলিত হয় এবং কোরআনে কারিমের মতো ঐশী গ্রন্থের প্রতিটি শব্দ সুসংহতভাবে সংরক্ষিত হয়।

ওহি লিপিবদ্ধকারীদের সংখ্যা

ওহি লিপিবদ্ধকারীদের সংখ্যা নির্ধারণ নিয়ে ইসলামী জীবনীকারদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ রয়েছে।কেউ কেউ তাঁদের সংখ্যা ১৩ বলে উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ কেউ ২০-এরও অধিক বলে মত দিয়েছেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও মুফাসসির ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’তে ওহি লেখকের সংখ্যা ২৩ উল্ল্লেখ করেছেন। তিনি শুধু সংখ্যাই নয়, তাঁদের নাম ও সংক্ষিপ্ত জীবনীও সেখানে সংকলন করেছেন। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘ওহি লিখে রাখার দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছেন ইসলামের চার খলিফা আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.) এবং আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)।’ এরপর তিনি যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন : আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আস, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবিত, মুআজ ইবনে জাবাল, আরকাম ইবনে আবি আরকাম (আসল নাম আবদে মানাফ), সাবিত ইবনে কায়স ইবনে শামাস, হানজালা ইবনে রাবি, খালিদ ইবনে আল-ওয়ালিদ, জুবাইর ইবনে আল-আওয়াম, আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ, আমির ইবনে ফুহাইরা, আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম, আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ, আল-আলা ইবনে আল-হাদরামি, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা, মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান প্রমুখ।এই মহান ব্যক্তিরা নবী করিম (সা.)-এর যুগে ওহি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বপ্রথম ওহি লিপিবদ্ধ করেছেন কে?

মক্কায় অবস্থানকালে প্রথম যে সাহাবি রাসুল (সা.)-এর জন্য ওহি লিপিবদ্ধ করেন, তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ (রা.)। আর মদিনায় হিজরত করার পর, নবীজি (সা.)-এর সামনে প্রথম ওহি লিখে রাখার সৌভাগ্য অর্জন করেন উবাই ইবনে কাব (রা.)। এত অধিকসংখ্যক সাহাবির দ্বারা ওহি লিপিবদ্ধ হওয়া থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে কেবল ওহি সংরক্ষণ নয়, বরং তাঁর প্রেরিত চিঠিপত্র, রাষ্ট্রীয় ঘোষণা, চুক্তিপত্র ও প্রশাসনিক দিকনির্দেশনাও লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করার একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা ছিল।

কোরআন সংকলনের প্রধান লেখক জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)

ওহি লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন সাহাবি জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)। তাঁকে শুধু একজন সাধারণ লেখক হিসেবে নয়, বরং ওহি লিপিবদ্ধকারীদের ইমাম ও নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ব্যাপারে একটি সহিহ হাদিসে তাঁর মর্যাদার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা আল-বারা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, যখন ‘মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তারা সমান নয়’ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘জায়েদকে ডেকে আনো এবং সে যেন তার সঙ্গে একটি ফলক, কালি রাখার কূপ এবং কাঁধের হাড়ের ফলক নিয়ে আসে।’ পরে তিনি বলেন, ‘লিখো…।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৫৯২)

এ ঘটনা প্রমাণ করে জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) শুধু ওহি লিপিবদ্ধকারীই ছিলেন না, বরং তিনি সরাসরি নবীজির নির্দেশনায় তা সম্পাদন করতেন। এ ছাড়া আবু বকর (রা.) এবং উমর (রা.) উভয়েই কোরআন সংকলনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক কাজে জায়েদ (রা.)-কে দায়িত্ব প্রদান করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102