সাংবিধানিক সংস্কার এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির উদ্দেশ্যে রাজধানীতে চলছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা। এই পর্যায়ের সপ্তম দিনের বৈঠক শুরু হয়েছে রোববার (২৯ জুন)।
সকাল ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হওয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। বৈঠক সঞ্চালনা করছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।
এদিনের আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে সংস্কার প্রস্তাবের কিছু অমীমাংসিত বিষয়। আলোচ্য বিষয়গুলো হলো—
১. রাষ্ট্রের মূলনীতি
২. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি ও ভূমিকা
৩. জাতীয় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি গঠন
৪. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি
৫. নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামো
এ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার ছয়টি বৈঠকে নয়টি এজেন্ডা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে কমিশন। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, এনসিপিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
আগের আলোচনায় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব থাকলেও, কমিশন সেটি থেকে সরে এসে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ গঠনের নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এই কমিটি গঠনে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সীমিত হতে পারে বলে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন—এমন প্রস্তাবনায় কিছু শর্তসাপেক্ষে বিএনপি সম্মতি জানিয়েছে।
সংবিধানের মূলনীতি সংশোধন নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগিয়েছে। বামপন্থী এবং কিছু রাজনৈতিক দল ব্যতীত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সংবিধানের মূলনীতি ধরে রাখার পক্ষে একমত হয়েছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাবও অধিকাংশ দল ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনায় অধিকাংশ দল ১০০টি পৃথক নারী আসনের পক্ষে মত দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও দলগুলোর মধ্যে আলোচনা এগিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আরও কয়েকটি বৈঠকের প্রয়োজন হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, প্রথম দফার আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় দফার আলোচনা সেই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলছে।