শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১০:৫৭ অপরাহ্ন

ঈদুল আজহার শিক্ষা ও করণীয়

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫

মুসলিম উম্মাহ ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন, আলহামদুলিল্লাহ। হজরত ইব্রাহিম (আ.)এর কুরবানির অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ১০ই জিলহজ তারিখে পশু কুরবানি করে থাকে।

ইসলামে এই যে কুরবানির শিক্ষা তা কি কেবল একটি পশু কুরবানির মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়ে যায়? আসলে পশু কুরবানি করাটা হচ্ছে একটা প্রতিকি মাত্র। আল্লাহতায়ালা চান মানুষ যেন তার পশুসূলভ হৃদয়কে কুরবানি করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুরো পরিবারের কুরবানি এমনই ছিল। তারা ব্যক্তি সার্থকে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করেছিলেন।

আল্লাহর সাথে প্রেমবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি কোরবানি চান আর এ কুরবানির অর্থ কেবল পশু জবেহ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ কুরবানি কারো জন্য নিজ প্রাণের কুরবানিও হতে পারে আবার কারো নিজ পশুত্বের কুরবানিও হতে পারে। আমরা যদি মনের পশুকে কুরবানি করতে পারি তাহলেই আমরা আল্লাহতায়ালার প্রিয়দের অন্তর্ভূক্ত হতে পারব। এছাড়া বাহ্যিকভাবে যত বড় পশুই কুরবানি করি না কেন তা তার কাছে মূল্য রাখে না। যেভাবে পবিত্র কুুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘কুরবানির মাংস বা এদের রক্ত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে তোমাদের পক্ষ থেকে তাকওয়া পৌঁছে’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩৭)। আল্লাহতা’লা আমাদের বুঝিয়েছেন, কুরবানির উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য শুধু এটি নয় যে যেভাবে ঈদুল আজহায় পশু কুরবানি করা হয়। শুধু পশু কুরবানিই এর  ‍মূল উদ্দেশ্য নয় বরং এটি আমাদেরকে অবগত করার জন্য যে উন্নত বস্তুর খাতিরে তুচ্ছ জিনিস কুরবানি করা আবশ্যক। এজন্যই মানুষের খাতিরে পশু কুরবানি করা হয়। তাই সব সময় আমাদেরকেও আমাদের সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসার খাতিরে উৎসর্গিত হওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত।

সুতরাং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত অনুযায়ী হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর নির্দেশে কুরবানি পালনের মাধ্যমে প্রতি বছর একজন মুসলমান নিজের মাঝে তাকওয়াকে আরেকবার ঝালিয়ে নেন যেন প্রয়োজনের দিনে আল্লাহর পথে কুরবানির পশুর মতো নিজেকে সমর্পণ করতে পারেন।

ঈদুল আজহার শরীয়ত দিক হলো, ঈদ গাহে দু’ রাকাত নামাজ আদায় করা, খুতবা শুনা এবং উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা। ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া মোস্তাহাব। মহানবী (সা.) ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজ আদায় পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)।

এছাড়া ঈদগাহে একপথ দিয়ে যাওয়া ও অন্যপথ দিয়ে ফেরা সুন্নত। (বোখারি) ঈদের নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ।

সুনানে ইব্ন মাজাহ গ্রন্থে ঈদের ফজিলত সম্পর্কে এসেছে, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে ইবাদত করবে তার অন্তরকে আল্লাহতায়ালা রহমত ও বরকতের বারিধারা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)

ঈদ উদযাপন মূলত আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন আর কৃতজ্ঞতার সর্বোত্তম পন্থা হলো, ধনী-গরীব সবাই একত্রিত হয়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা। ঈদ কেবল ভাল খাওয়ার বা ভাল পরার আর বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ ভ্রমণ করার নাম নয় বরং কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য একটা বিশেষ সুযোগ হিসেবে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ঈদ দান করেছেন।

ঈদের দিন যেভাবে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে যায়, এক কাতারে সবাই নামাজ আদায় করি, সবার সাথে হাসি মুখে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করি, ঠিক তেমনিভাবে সারাবছর একই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে আর বিভেদের সকল দেয়ালকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে।

বিশ্বময় সর্বপ্রকারের হিংসা বিদ্বেষ ও হানাহানি মুক্ত হোক। আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক আর হাসিখুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ।

সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

লেখক:মাহমুদ আহমদ

ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102