বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

গাজায় একদিনে ৭৩ নিহত, পুরো পরিবার ছিন্নভিন্ন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে আবারও রক্তাক্ত হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র হামলা চালায়। এতে একদিনেই অন্তত ৭৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান, যার মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হন ৪৩ জন।

হামাস একে পরিকল্পিত গণহত্যা আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির অভিযোগ, পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে হত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সাবরিন আল-মাবহুহ আল জাজিরাকে বলেন, “আমার ভাইকে তার ঘরেই মেরে ফেলেছে। স্ত্রী-সন্তানসহ কেউ বেঁচে নেই।” একইভাবে শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলায় আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শেখ রাদওয়ান জ্বলছে। যদি গাজা সিটির দখল ঠেকানো না যায়, আমরা সবাই মরব। যারা দেখছে অথচ কিছু করছে না, আমরা তাদের ক্ষমা করব না।”

গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ১০০ বার রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক ও মহল্লা ধ্বংস করেছে। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা সিটিতেই মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষ।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ সরেজমিনে বর্ণনা করে বলেন, “পরিস্থিতি প্রলয়ংকরী। মনে হচ্ছে এর কোনো শেষ নেই। পুরো মহল্লা একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, সব মুহূর্তেই হারাচ্ছে। এটি যেন এক দুঃস্বপ্ন।”

একই দিনে উত্তর গাজার আল-জারিসি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। হামাস এটিকে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংসের এক নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা।

মানবিক সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ ছয়জন অনাহারে মারা গেছে। চলমান অবরোধে এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত কারণে ৩৬৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ১৩১ শিশু।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের দখল অভিযান প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। কেবল ১৪ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে নতুন করে ৮২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩০ হাজারকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরতে বাধ্য করা হয়েছে।

শিশুদের অবস্থাই সবচেয়ে শোচনীয়। ইউনিসেফের হিসাবে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ পাঁচ বছরের নিচের অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে মোট ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, “দুর্ভিক্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের এখনই জরুরি খাদ্য সহায়তা ও বিশেষ পুষ্টি পণ্য প্রয়োজন।”

খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গত আগস্টে নিশ্চিত করেছে, উত্তর গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, যা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে। মানবিক সহায়তাকর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে প্রতিদিন টিকে থাকাটাই এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য এক কঠিন সংগ্রাম।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102