শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

শিল্পবর্জ্যে কৃষিজমির ক্ষতিপূরণ আদায়ে মাঠে ক্ষতিগ্রস্তরা

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫
গত ১৫ বছরে ময়মনসিংহের ভালুকায় কারখানার বর্জ্যের কারণে কৃষিজমির ক্ষতিপূরণ আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন উপজেলার ভরাডোবা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্তরা ইতিমধ্যে উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের ভরাডোবা গ্রামে এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিলের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। দাবি আদায় না হলে আগামী সপ্তাহ থেকে কঠিন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ওই কর্মসূচি থেকে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকসহ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভরাডোবা এলাকায় একাধিক কারখানা থেকে নেমে আসা দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানি এলাকার কৃষকের শত শত একর জমির ফসল নষ্ট করছে।

এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে একটি কমিটি করে দেন। ওই কমিটির মাধ্যমে উপজেলার পরিষদ সভাকক্ষে গত ৯ জুলাই, ১৩ আগস্ট, ২৭ আগস্ট এবং ১০ সেপ্টেম্বর চার দফায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। চার দিনের ওই গণশুনানিতে কারখানার দূষিত বর্জ্যে উপজেলার ভরাডেবা ইউনিয়নের ভরাডোবা, পুরুড়া, রাংচাপড়া ও ভাটগাঁও কৃষি ব্লকে ৩৩৫ দশমিক ৭৪ একর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
এতে উৎপাদন ব্যয় ছাড়াই প্রতি একর জমির জন্য বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে গত ১৫ বছরে এলাকার ওই পরিমাণ জমিতে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। পরে তদন্ত কমিটির দেওয়া সুপারিশে কৃষকের মোট আর্থিক ক্ষতির ৭৫ শতাংশ টাকা স্থানীয় এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল লিমিটেড এবং ২৫ শতাংশ টাকা মুলতাজিম স্পিনিং মিল লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে বহন করতে বলা হয়। এদিকে, ১৫ বছরে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ভরাডোবা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে তারা শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের ভরাডোবা গ্রামে এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। এতে, স্থানীয় শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে কৃষক প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমীন, আবদুর রহিম আকন্দ, মনির তালুকদার, নুরুজ্জামান কবির, মাসুদ রানা, জনাব আলী মণ্ডল, রেজাউল মাস্টার, কামাল হোসেন, হুমায়ুন মণ্ডল, ক্বারী জয়নাল আবেদিন, মনিরুজ্জামান, শাহ জালাল আকন্দ, শাহাদাত হোসেন মানিক, শেখ ফরিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিল, হ্যারি ফ্যাশন লিমিটেডের রাসায়নিক মিশ্রিত পানি এবং মুলতাজিম স্পিনিং মিলের খামারের গরুর গোবর ও অন্যান্য বর্জ্য কৃষিজমিতে পড়ে। এতে বছরের পর বছর ধরে তাঁরা জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না।

এক সময় যারা জমির ধান দিয়ে সংসার চালাতেন, তাদের উঠানে এখন ধানের দেখা মিলছে না। জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পারায় তারা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তারা অবিলম্বে উপজেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় উঠে আসা কৃষকদের ক্ষতপূরণ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশ করা  ক্ষতিপূরণের টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। 

কৃষক নেতা রুহুল আসিন বলেন, ‘উপজেলার ভরাডোবা এলাকায় কারখানার বর্জ্যের কারণে হওয়া দূষণে এলাকার ফসলের ক্ষতি রোধে অতীতেও আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু  কারখানা কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করে গত বছর নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গত ১৫ বছরে ভরাডোবা এলাকায় শিল্পবর্জ্যে ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি টাকা উঠে এসেছে। ফসলি জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য মিল কর্তৃপক্ষকে আগামী শনিবার (৮ নভেম্বর) পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা  আলোচনায় না এলে আগামীতে মহাসড়ক অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন ইতোমধ্যে আমার কাছে আসছিল। তারা অচিরেই কৃষকদের সঙ্গে বসে বিষয়টি ফায়সালা করবেন বলে জানিয়ে গেছেন তাঁরা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102