বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

ফিরেছে মাস্ক পরার দিন

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
আবারও বাড়তে শুরু করেছে কভিড-১৯ সংক্রমণ। রোগটির নতুন কয়েকটি সাবভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। নতুন করে আবারও জনসমাগমে মাস্ক পরার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কভিডের নতুন ভেরিয়েন্টের ধরন ও সাবধানতায় করণীয় জানাচ্ছেন অধ্যাপক ব্রিগে. জেনা. (অব.) এ এফ এম শামসুল হক
পাঁচ বছর আগে প্রথমবার মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল করোনাভাইরাস তথা কভিড-১৯। এর পর থেকে ভাইরাসটি ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে। নতুন সব সাবভেরিয়েন্ট (উপপ্রজাতি) আবির্ভূত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি কিছু নতুন সাবভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।ফলে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশেও বাড়তি সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে।
কারণবেশ কিছু নতুন কভিড ভাইরাস সাবভেরিয়েন্টের কারণে ২০২৫ সালে এসে আবারও বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এ রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, কভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন পাঁচটি সাবভেরিয়েন্টের ফলে নতুন করে ছড়াচ্ছে এ রোগ।পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে জেএন১, এলএফ৭, এক্সএফজি, এনবি ১.৮.১, এক্সএফসি ভেরিয়েন্টগুলোর কারণেই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো ছড়িয়ে পড়ার প্যাটার্ন বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছে। এসব ভেরিয়েন্ট মূলত ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট পরিবারের সদস্য। এগুলোর মধ্যে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে যেমন—উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা, টিকা প্রতিরোধী গুণাবলি ও উপসর্গের ভিন্নতা।

নতুন সাবভেরিয়েন্টের উপসর্গগুলো সাধারণত আগের ওমিক্রনের মতোই, তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে—♦ হালকা থেকে মাঝারি জ্বর

♦ গলা ব্যথা বা খুসখুসে কাশি

♦ সর্দি বা নাক বন্ধ

♦ মাথা ব্যথা

♦ ক্লান্তিভাব ও শরীর ব্যথা

♦ মাঝে মাঝে হজমের সমস্যা (ডায়রিয়া/বমি)

তবে স্বাদ ও গন্ধ হারানোর হার তুলনামূলকভাবে কম।

শিশু ও প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় তাদের মধ্যে উপসর্গ গুরুতর হতে পারে।

ঝুঁকি

নতুন সাবভেরিয়েন্টগুলোর সংক্রমিত করার ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও রোগের তীব্রতা কম। তবে কভিড-১৯ ভাইরাস যেকোনো সময় নতুন সাবভেরিয়েন্ট তৈরি করে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।সাবধানতা এবং সচেতনতা জরুরি।ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, পানিবাহিত সংক্রমণজনিত জ্বর (যেমন—টাইফয়েড) ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এ সময়। এ রোগে যারা ভুগছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কভিড হওয়ার সম্ভাবনা এবং রোগটির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সাধারণত গরম গুমোট আবহাওয়ায় করোনাভাইরাস বেশি সংক্রমিত হয়। অন্যান্য বছরও মে মাস থেকেই করোনার প্রকোপ বেড়েছে, এ বছরও তাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের এপ্রিল মাসে দেশে কভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩ জন। মে মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ জনে। আর জুন মাসের প্রথম আট দিনে আক্রান্ত হয়েছে ৩৬ জন এবং এরমধ্যে একজন মারাও গেছেন।ধরন

২০২৩ সালের শেষের দিকে বিশ্বে প্রথম জেএন১ সাবভেরিয়েন্টটি শনাক্ত হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত সংক্রামক হলেও এর উপসর্গ তুলনামূলক হালকা। ২০২৪ সালের শুরুতে এটি প্রথম বাংলাদেশে ধরা পড়ে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে কিছু রোগী শনাক্ত হয়। তবে পূর্ববর্তী সংক্রমণ ও টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে সম্ভব হয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

এলএফ৭ সাবভেরিয়েন্ট মূলত এশিয়া ও ইউরোপে সীমিতভাবে শনাক্ত হয়েছে। এ ভেরিয়েন্টটির অ্যান্টিবডি অ্যাভয়ড্যান্স বেশি। তাই টিকা নিলেও সংক্রমণ হতে পারে। বাংলাদেশে এখনো এই ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি। এক্সএফজি এবং এনবি ১.৮.১ নামক দুটি সাবভেরিয়েন্ট কয়েকটি দেশে পাওয়া গেছে। এ দুটি ভেরিয়েন্টের প্রভাবেই বর্তমানে দেশে কভিড-১৯ সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

নতুন এই সাবভেরিয়েন্টগুলো নিয়ে বেশ সতর্ক বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের স্ক্রিনিং, পিসিআর টেস্ট এবং সন্দেহভাজন রোগীদের জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে নজরদারি চলছে। আইইডিসিআর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে রিপোর্ট ও গবেষণা প্রকাশ করছে, যাতে দেশের মধ্যে কোনো নতুন ভেরিয়েন্টের আগমন হলে তা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কভিড-১৯-এর জন্য বরাদ্দকৃত বেড, আইসিইউ সুবিধা, অক্সিজেন সাপোর্ট এবং টেস্টিং সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এ ছাড়া ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ ও টিকা কার্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণকে টিকা প্রদানের তথ্য ও সময়সূচি জানানো হচ্ছে। যাদের এখনো বুস্টার ডোজ নেওয়া হয়নি, তাদের জন্য বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা প্রয়োজন। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সংক্রমণের হার কম হলেও নতুন সাবভেরিয়েন্টগুলো যেকোনো সময় সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে পারে।

করণীয়

নিজের সুরক্ষায় রোগ প্রতিরোধের বিকল্প নেই।

♦ জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। খুব প্রয়োজন হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।

♦ শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।

♦ হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন।

♦ ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন।

♦ ঘন ঘন সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)।

♦ অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না।

♦ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়—

♦ জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন।

♦ রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।

♦ রোগীর সেবাদানকারীরাও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করুন।

♦ প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতাল অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩) এর নম্বরে যোগাযোগ করুন।প্রতিরোধ সব সময় কার্যকর না-ও হতে পারে। তাই জ্বর, কাশি, গলা ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত কভিড পরীক্ষা করতে হবে। কভিডের আলাদা করে তেমন চিকিৎসা নেই। রোগীকে অনেক বিশ্রাম নিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য জটিল উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত।সঠিক নজরদারি, ভ্যাকসিনেশন ও জনসচেতনতার মাধ্যমে এই ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102