‘আমারে এক লাখ ৩০ দে’, শ্রীপুর থানার ওসির ঘুষ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট
-
আপডেট টাইম:
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
-
২২
বার পঠিত
গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের ঘুষ-বাণিজ্যের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমিনুলরে বলে দিছি, আমারে এক লাখ ৩০ দে’।গতকাল রবিবার (২০ এপ্রিল) রাতে অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে।তবে ফাঁস হওয়া অডিওটির কণ্ঠ তার নয় বলে দাবি করে ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘এই ভয়েসটা আমার না।আমি কখনোই এমন কথা বলি নাই। কেউ এডিট করে এই কাজগুলো করেছে।’এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অডিওটিতে ওসি যার সঙ্গে কথা বলছেন তার নাম সেলিম শিকদার। তিনি শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে।সেলিম ওই এলাকার একজন ঝুট ব্যবসায়ী। সেলিম শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি ওসির সঙ্গে আমার কথোপকথনের রেকর্ড। প্রায় দুই মাস আগে আমি এটা ধারণ করেছিলাম। পরে আমি ছিলাম জেলে, মোবাইল ফোনটি আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে ছিল।তখন মোবাইল ফোন থেকে কিভাবে অডিওটি ফাঁস হয়েছে আমার জানা নেই।’তিনি আরো বলেন, ওসি জয়নাল আবেদীন একদিন এক এসআই মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে থানায় ডাকেন। থানায় গেলে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। পরে ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কথা বলেন তিনি। কথা বলার সময় ওসি তাঁকে বলেন, ‘ব্যবসা (ঝুটের ব্যবসা) করতে হলে প্রতি মাসে আমাকে দুই লাখ টাকা দিতে হবে’।টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। অনেক অনুরোধের পর প্রতিমাসে এক লাখ টাকায় ওসির সঙ্গে রফা হয় তাঁর।সেলিম শিকদার জানান, ওই কথা অনুযায়ী তিন মাস তিনি টাকা দিয়ে যান। এরই মধ্যে কয়েকবার তাকে ফোন দিয়ে ওসি বলেছেন, ‘এক লাখে হবে না; দুই লাখ করে দিতে হবে’। পরে কোনো মাসে দেড় লাখ কোনো মাসে দুই লাখ টাকাই দিতে হয়েছে।ফাঁস হওয়া অডিও প্রসঙ্গে সেলিম শিকদার বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে তুলা উন্নয়ন বোর্ড রোডে (শ্রীপুরের নতুন বাজার) ওসির গাড়িতে বসে দুজন কথা বলেছি। উনার যে মাসোহারাটা উনাকে দেই। দেওয়ার পর উনি আমাকে বলেন এই টাকায় হবে না, তুমি তোমার নানাকে বলো আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য। আমি উনাকে বলি, এত টাকা স্যার দিতে পারমু না। আমার আরেক মামা জাকির উনার কাছ থেকেও ওসি এভাবে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমার শাহাব উদ্দিন মামার কাছ থেকে নিয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা।’কল রেকর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম ওসি আমাকে ব্যবসা করতে দেবেন না। আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করবেন। এই কারণে আমি রেকর্ডটা করছি। গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক বিএনপি নেতার মাধ্যমে রাত দেড়টার দিকে বাড়ি থেকে রাস্তায় ডেকে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠান।থানায় নিয়ে যাওয়ার পর আমার পরিবারের লোকজন ওসির সঙ্গে দেখা করলে তিনি ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। ওসি তাদের বলছিলেন, ১০ লাখ টাকা দিলে আমাকে ফিফটি ফোরে (৫৪ ধারা) চালান দেবেন নাহলে ১০টা হত্যা মামলা দেবেন। তখন আমার পরিবার ভয়ে উনার কাছে আড়াই লাখ টাকা তুলে দিয়েছে। টাকাটা নিয়ে উনি থানা থেকে বাইরে চলে যান। তারপর আমাকে হত্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠান। আমি একমাস জেল খেটেছি। তারপর জামিনে বের হয়েছি। আমার ব্যবসা এখন নাই। ব্যবসা নিয়ে নিছে।’তিনি অভিযোগ করেন, ‘কথোপকথনের রেকর্ডটা ফাঁস হওয়ার পর থেকে আমি খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ওসি গতকাল রবিবার রাতে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে মেসেঞ্জারে বারবার ফোন দিয়েছেন। একটা লেখাও দিয়েছেন যেন এই লেখাটা আমি ফেসবুক লাইভে এসে বলি। না বললে আমার ক্ষতি হবে, আমাকে ভয়ভীতি দেখাইছে। এগুলো না করলে ভবিষ্যতে মামলা দেবে। এমনকি আমার পারিবারিক কোনো ক্ষতি করবে।’কল রেকর্ডটি আসলেই ওসির কিনা জানতে চাইলে সেলিম দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘রেকর্ডটা সম্পূর্ণ সত্য। এটা মিথ্যা হওয়ার কোনো কারণ নাই। আরেকটা রেকর্ড আছে, ওইটাও আমি দেবো। আমি সবার কাছে আমার নিরাপত্তার জন্য দোয়া চাই। আমার যেন কোনো ক্ষয়ক্ষতি উনি না করতে পারে। আমি এই ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ওসি বিচার চাই।’
নিউজটি শেয়ার করুন..
-
-
-
- Print
- উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..