শুল্ক নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কথা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যে সব দেশ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবে, সেই সব দেশের পণ্যের উপরেও পাল্টা কর চাপাবে আমেরিকা।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘তিনটি দুর্দান্ত সপ্তাহ কাটল। বোধহয় এই সপ্তাহ তিনটি সর্বকালের সেরা। কিন্তু আজ বড় একটা দিন। পারস্পরিক শুল্ক আরোপ! মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন।’
এরপরেই ট্রাম্প ওভালে নিজের অফিসে বসে ঘোষণা করেন পারস্পরিক শুল্ক আরোপের। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘মার্কিন মিত্ররা প্রায়শই বাণিজ্য ইস্যুতে আমাদের শত্রুদের চেয়েও খারাপ’।
প্রতিটি মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারের উপর নির্ভর করে শুল্ক নির্ধারণ করা হবে এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হবে।
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদারদের লক্ষ্য করে বিস্তৃত পরিসরের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তি দিয়েছেন যে এই পদক্ষেপ অন্যায্য অনুশীলন মোকাবেলায় সহায়তা করবে এবং কিছু ক্ষেত্রে নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট শুল্ককে রাজস্ব বৃদ্ধি, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূরীকরণ এবং মার্কিন উদ্বেগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশগুলোকে চাপ দেয়ার একটি উপায় হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসে। শুল্ক আরোপ করা হলে ঠিক কখন থেকে তা কার্যকর হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, পারস্পরিক শুল্কের ফলে ভারত ও থাইল্যান্ডের মতো উদীয়মান বাজার অর্থনীতিতে ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধি হতে পারে, কারণ এই দেশগুলোতে মার্কিন পণ্যের উপর কার্যকর শুল্ক হার বেশি থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, তারা এই পদক্ষেপের জেরে বিশেষ সমস্যার মুখে পড়বে না।
ট্রাম্পের নীতি বিষয়ক ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার পূর্বে বলেছিলেন, দেশগুলো অন্যায্য বাণিজ্য সুবিধা পেতে ভ্যাট ব্যবহার করে, যদিও বিশ্লেষকরা এটিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চোখের বিনিময়ে চোখ, শুল্কের বিনিময়ে শুল্ক, একই বিষয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি ভারত মার্কিন গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ওয়াশিংটন ভারত থেকে গাড়ি আমদানির উপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এশীয় অর্থনীতির মধ্যে, ভারতের মার্কিন রপ্তানির উপর ৯.৫ শতাংশ কার্যকর শুল্ক রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানির উপর হার তিন শতাংশ।
নোমুরা রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন পণ্যের উপর থাইল্যান্ডের হার ৬.২ শতাংশ এবং চীনের হার ৭.১ শতাংশ। ক্যাটো ইনস্টিটিউটের স্কট লিন্সিকোম এর আগে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছিলেন, দরিদ্র দেশগুলো প্রায়শই উচ্চ শুল্ক আরোপ করে, যারা রাজস্ব এবং সুরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে কারণ তাদের কাছে অ-শুল্ক বাধা আরোপের জন্য কম সম্পদ রয়েছে।
সূত্র : এনডিটিভি