রাজধানীর তুরাগে ৫ম তলা ভবনের ছাদের একটি রুমের বিছানায় গলাকাটা অবস্থায় মৌসুমী ইয়াসমিন সুমি (৩৫) নামের এক নারী এবং রুমের মেঝেতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ইব্রাহিম শেখ অপূর্ব (৩০) নামের অপর এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত ১২:২১ মিনিটে তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার খায়েরটেক এলাকার ৪নম্বর রোডের ৮নং বাড়ীর চিলেকোটার ওই রুম থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে তুরাগ থানা পুলিশ।
ধারণা করা হচ্ছে, যুবক ইব্রাহিম শেখ ওই নারীকে হত্যা করে এরপর নিজেও আত্মহত্যা করেছে। তবে, কি কারণে এমনটা ঘটতে পারে তা স্পষ্ট করতে পারেনি কেউই।
গলাকাটা মৌসুমী চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ থানাধীন আশ্বিনপুর নায়েরগাঁও গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের মেয়ে। মৃত মৌসুমী দুই সন্তানসহ স্বামী মো. ফারুক আক্তারের সঙ্গে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকত। অন্যদিকে, মৃত ইব্রাহিম শেখ ওরফে অপূর্বের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের চন্দ্রাভাসন থানাধীন ১নং ওয়ার্ডে মধু শিকদারের ডাঙ্গী এলাকায়। তার বাবার নাম শেখ হাসেম।
জানা যায়, ১০/১২ বছর আগে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে নিজেদের মধ্যে ধর্মের ভাই-বোন সম্পর্ক গড়ে তোলেন তারা। বিষয়টি মৃত মৌসুমীর স্বামী ফারুক হোসেনও জানত এবং তাদের মধ্যে টাকা-পয়সারও লেনদেন ছিল বলে জানা গেছে।
মৃত মৌসুমী ইয়াসমিনের স্বামী জানায়, ছেলেরা স্কুল ছুটি শেষে বাসায় ফিরে একটি চিঠি পায়। চিঠিতে ওদের মায়ের হাতে লেখা ছিল স্কুল ছুটি হলে তাকে যেন ইব্রাহিম চাচার বাসা থেকে নিয়ে আসে। এটা পেয়ে দুই সন্তান ওই বাড়ির ছাদে গিয়ে ভেতর থেকে আটকানো রুমের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করে। বিষয়টি আমাকে জানালে এরপর আমি এসে দেখি লোকজন জড়ো হয়ে আছে।
স্বামী ফারুক আরো জানায়, ইব্রাহিম শেখের কাছে তারা পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা পেত। ১৩ তারিখ এই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। স্ত্রী মৌসুমীর সঙ্গে মৃত ইব্রাহিম প্রায়ই ফোনে কথাবার্তা বলতো এবং বাসায় আসা-যাওয়া করত বলে জানিয়েছে স্বামী ফারুক আক্তার।
ঘটনাস্থলের বাড়িওয়ালা জহিরুল ইসলাম জানায়, সন্ধ্যায় বাচ্চারা এসে যখন দরজায় ডাকাডাকি করছিল তখন আমরাও এসে ডাকাডাকি করি। ভেবেছিলাম হয়তো পরকিয়াজনিত কিছু হবে। কিন্তু, অনেক ডাকাডাকির পরেও যখন খুলছিল না তখন মনে সন্দেহ হওয়ায় এলাকার কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানালে কাউন্সিলর যুবরাজ ভাই পুলিশ পাঠায়। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে একজনকে গলাকাটা এবং অপরজনকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে।
চাঞ্চল্যকর এই জোড়া লাশের বিষয়ে তুরাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু সাইদ মিয়া ঘটনার সতত্য নিশ্চিত করে বলেন, রাত (মঙ্গলবার) আটটার দিকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। ভেতর থেকে দরজা লাগানো থাকায় ক্যামেরা চালু করে দরজা ভেঙ্গে আমরা রুমে প্রবেশ করে দুজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। ঘটনাস্থলে ক্রাইম সিন টিম পরিদর্শন করেছে।
এটা কি ধরণের মার্ডার জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ধারণা করা যাচ্ছে, ছেলেটি মহিলাকে গলাকেটে হত্যা করে এরপর নিজেও আত্মহত্যা করেছে। তবে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।
এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা সম্পর্কে ওসি (তদন্ত) মো. আবু সাইদ মিয়া বলেন, উভয় পক্ষের লোকজনকেই থানায় নিয়ে যাব। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হবে।