সারা দেশে ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৩৩৭টি মার্কেট ও শপিংমল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে সন্তোষজনক অবস্থায় আছে ৩ হাজার ২৫৬টি। বাকি ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে ৪২৪টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশের ৩৯ দশমিক ৪১ ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ (২০২২ সালের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল ৫৩ দশমিক ৭৮ ভাগ)। কোনো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিককে বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইনগতভাবে কিছুই করার থাকছে না রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিসের। তবে ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার ফায়ার সার্ভিসের আছে। এরপরও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। আগামী সপ্তাহ থেকেই মামলার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, রাজধানীর ৫৮টি মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিংমল অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূণ ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ। পরিদর্শন করা মার্কেট ও শপিংমলের মধ্যে প্রায় ৭৬ ভাগই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব স্থাপনায় যে কোনো সময় আগুন লাগতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিসের আশঙ্কা। ঝুঁকির তালিকায় আছে সিটি করপোরেশনের স্থাপনাও। অগ্নিনিরাপত্তার দিক দিয়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হলো রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বরিশাল প্লাজা মার্কেট, আলাউদ্দিন মার্কেট, শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, শহিদুল্লাহ মার্কেট, শরীফ মার্কেট, মায়া কাটরা (২২ মার্কেট) ও সিদ্দিকবাজারের রোজনীল ভিস্তা। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ভবনগুলো হলো আলম সুপার মার্কেট, উত্তরা মার্কেট (খিলগাঁও), সালেহা শপিং কমপ্লেক্স, মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স, লন্ডন প্লাজা শপিংমল, এ কে ফেমাস টাওয়ার, রোজভ্যালি শপিংমল, মেহের প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, নিউ চিশতিয়া মার্কেট, চিশতিয়া মার্কেট, নেহার ভবন, ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেট এবং সুবাস্তু অ্যারোমা শপিংমল।
ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর যেসব স্থাপনা সাধারণ ঝুঁকিতে আছে সেগুলোর মধ্যে আছে বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট, তিলপাপাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট, হাজী হোসেন প্লাজা, ইসলাম প্লাজা, নিউমার্কেট (কোনাপাড়া, ডেমরা), আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, এ হাকিম কমপ্লেক্স, বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স, ড্রিমওয়্যার, এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, ফেয়ার প্লাজা, শেপাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, নাসা মেইনল্যান্ড, জাকারিয়া ম্যানশন, হাজী আব্দুল মালেক ম্যানশন, ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড, গ্লোব শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট (উত্তর ডি ব্লক), নুরজাহান সুপার মার্কেট, হযরত বাকু শাহ হকার্স মার্কেট, ইসলামিয়া বই মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১, সিটি প্লাজা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, হান্নান ম্যানশন, নগর প্লাজা, রোজ মেরিনাস মার্কেট এবং দুকু টাওয়ার।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে ২০২২-এই পাঁচ বছরে ১৬ হাজার ২৭৩টি ভবন পরিদর্শন করেছে। এগুলোর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল দুই হাজার ৩৩৫টি। সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল ৬ হাজার ৪১৬টি। আর সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল ৭ হাজার ৫২২টি ভবন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় শপিংমল ও মার্কেট ছিল ৬৭৪টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ৩৩৬টি। এছাড়া ১১টি ব্যাংক, ১৩৪টি হাসপাতাল/ক্লিনিক, ২৯টি আবাসিক হোটেল এবং তিনটি মিডিয়া সেন্টার ছিল। ওই পাঁচ বছরে মোট ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ছিল প্রায় ৫৪ ভাগ। ওই সময় পরিদর্শন করা ১ হাজার ৫৯৫টি মার্কেট ও শপিংমলের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল ৬৮৪টি। আর সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ৮৯৭টি। অর্থাৎ পরিদর্শন করা মার্কেট ও শপিংমলের ৯৮ দশমিক ৫০ ভাগই ছিল ঝুঁকির তালিকায়। মাত্র ২৪টি প্রতিষ্ঠান (শতকরা দেড় ভাগ) ছিল সন্তোষজনক পর্যায়ে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে পরিদর্শন করা রাজধানীর ৫৮টি মার্কেট ও শপিংমলের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ৭৫ দশমিক ৯০ ভাগ। গত বছর ফায়ার সার্ভিস সারা দেশে যেসব ভবন পরিদর্শন করেছে, সেগুলোর মধ্যে ঝুঁকির তালিকায় ঢাকার ভবনের সংখ্যা বেশি। ঢাকার ১ হাজার ২০৯টি ভবনের মধ্যে ১২৭টি ছিল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। আর সাধারণ ঝুঁকিতে ছিল ৬০২টি। চট্টগ্রামের ১ হাজার ৪৮৪টি ভবনের মধ্যে অতিঝুঁকিতে ২৪৬ এবং সাধারণ ঝুঁকিতে ছিল ৫২৪টি ভবন।
সাধারণ ঝুঁকিতে থাকা খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার মার্কেট পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আমাদের এখনো কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। কেন আমাদের ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে জানি না। তবে যতটুকু জানি, আমাদের পানির রিজার্ভ ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার লিটার। এটা খুবই অপ্রতুল। কম করে হলেও এখনে এক লাখ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রিজার্ভ ট্যাংক প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে মেয়র মহোদয়ের কাছে আবেদন জানানো হলেও লাভ হয়নি।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, আমরা নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবেই ভবনের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করি। যেসব ভবনে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকে, সেসব ভবন কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নোটিশ দিই। আইনে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় আমরা এসব ভবনের বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে এসব ভবনে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে মামলা করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের অর্গানোগ্রাম দিয়ে চলছে ফায়ার সার্ভিস। এখন সারা দেশে আমাদের জনবল মাত্র ১৪ হাজার। জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জনবলের স্বল্পতা কাটিয়ে ওঠা গেলে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা যাবে।