রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

একক প্রার্থী নিয়ে ফুরফুরে জাতীয় পার্টি

উত্তরা নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২
  • ৪৭৩ বার পঠিত

রংপুর সিটি নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার মেয়র পদে ১০ জনসহ ২৭৭ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি জাতীয় পার্টির অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভাইস-চেয়ারম্যান সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর কমিটির সাবেক আমির মাহবুবার রহমান বেলালও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এদিকে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) রওশনপন্থি হিসাবে পরিচিত একেএম আব্দুর রউফ মানিক মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় দলটির একক প্রার্থী এখন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহানগর কমিটির সভাপতি এবং সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি মঙ্গলবার মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এ কারণে রংপুর জাতীয় পার্টিতে স্বস্তি বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।

জানা যায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধ চললেও রংপুর সিটির মেয়র প্রার্থী হিসাবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে সমর্থন করেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। যদিও অনেক আগেই পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাকে দলের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেন। কিন্তু কাদের-রওশনের বিরোধের কারণে গুঞ্জন ছিল চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে পালটা প্রার্থী দেবেন রওশন। কিন্তু দুজনের ‘ঐক্যমত’র কারণে লাঙ্গল নিয়ে সেই শঙ্কা কেটে গেছে।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া থাকলেও স্বতন্ত্র হিসাবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু। ফলে এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি বিরাজ করছে। দলটির নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় দলটির নেতাকর্মীসহ অনেকেই হতবাক হয়েছেন। তারা ডালিয়ার মনোনয়নকে অপ্রত্যাশিত অখ্যায়িত করেছেন। এ নিয়ে দলীয় কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। বিষয়টি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে।

তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, তাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। যা আছে তা মান-অভিমান। যা শিগগিরই কেটে যাবে। নির্বাচনি মাঠ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে কাজ করবেন এবং দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনবেন।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের মানুষ অতীতে যেমন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তেমনি এবারও ভুল করবেন না। ২৭ ডিসেম্বর নগরবাসী ভোট দিয়ে লাঙ্গলকে বিজয়ী করবে। ইভিএম নিয়ে বাইরের কেউ যেন কোনো কারসাজি করতে না পারে সেজন্য নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতে হবে।

এরপরই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের মানুষ নৌকায় ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। ২৭ ডিসেম্বর হবে নৌকা মার্কার বিজয়ের দিন। তিনি আরও বলেন, বিদ্রোহী হিসাবে অপর প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়ে এখনি কিছু বলার নেই। সময় এখনও আছে। শেষ পর্যন্ত তারা নাও থাকতে পারেন। বিষয়টি কেন্দ্র অবগত আছে। এ বিষয়ে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।

এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনি।

এবারের সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছে বিএনপি। তাদের জোটের দল জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর কমিটির সাবেক আমির মাহবুবুর রহমান বেলাল এতদিন প্রচার চালালেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেননি। তিনি জানান, এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

রংপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে মেয়র পদে ১০, সংরক্ষিত নারী আসনে ৬৯ এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১৯৮ জনসহ ২৭৭ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রতীক দেওয়া হবে।

তফশিল অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই। প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ৯ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ২৭ ডিসেম্বর।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩
themesba-lates1749691102