(সুরা : ঝুমার, আয়াত : ২৩)
আবদুল্লাহ বিন উরওয়া বিন জোবায়ের (রহ.) বলেন, আমি আমার দাদি (বা নানি) আসমান বিনতে আবু বকর (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোরআন তিলাওয়াতের সময় সাহাবায়ের কিরাম (রা.) কী করতেন? তিনি বললেন, আল্লাহ যেমনটি বলেছেন, তারা তেমনি করতেন—তাদের চোখ অশ্রু বর্ষণ করত এবং শরীরে শিহরণ জাগত।
কোরআন পাঠের সময় মুমিন তার অভিব্যক্তি নানাভাবে প্রকাশ করে থাকে। যেমন—
১. দয়া প্রার্থনা করা : ইমাম নববী (রহ.) বলেন, কোনো রহমতের আয়াত পাঠ করার সময় আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ কামনা করা মুস্তাহাব।(জখিরাতুল উকবা : ৬/৬৩১)হুজায়ফা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে তাহাজ্জুদ আদায় করলাম।…তিনি থেমে থেমে ধীরে ধীরে পড়ছিলেন। তাসবিহের আয়াত এলে তাসবিহ পড়ছিলেন আর কোনো কিছু চাওয়ার আয়াত এলে চাইলেন। যখন আশ্রয় প্রার্থনা করার কোনো আয়াত পড়ছিলেন তখন প্রার্থনা করছিলেন।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৯৯)২. আশ্রয় চাওয়া : ইমাম নববী (রহ.) বলেন, কোনো আজাবের আয়াত পাঠ করার সময় আল্লাহর কাছে শাস্তি ও অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়া মুস্তাহাব। সে বলবে, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই অথবা বলবে, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সব অপছন্দনীয় বিষয় থেকে মুক্তি চাই। (জখিরাতুল উকবা : ৬/৬৩১)আউফ বিন মালিক (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে (রাতে ছিলাম এবং ঘুম থেকে) উঠলাম। …তিনি কোনো রহমতের আয়াতে পৌঁছলে তিনি থেমে দোয়া করলেন এবং কোনো শাস্তির আয়াত এলে তিনি থেমে থেমে আল্লাহর আশ্রয় চাইলেন।(সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১১৩২)
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৫০)
৪. কান্না করা : আলেমরা বলেন, কোরআন তিলাওয়াতের শিষ্টাচার হলো তিলাওয়াতের সময় কান্না করা। কারো কান্না না এলে কান্নার ভান করা, নিজের ভেতর চিন্তা ও বিনয় জাগ্রত করা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৯)
সাআদ বিন মালিক (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতাসহ অবতীর্ণ হয়েছে (অর্থাৎ এতে চিন্তিত হওয়ার মতো বিষয় আছে)। সুতরাং তোমরা যখন তা পাঠ করবে তখন কান্না করবে। আর কান্না করতে না পারলে কান্নার ভান করবে।’ (দয়িফুল জামে, হাদিস : ২০২৫)
৫. আমলের প্রতিজ্ঞা করা : মুমিন কোরআন তিলাওয়াতের সময় আমল করার প্রতিজ্ঞা করবে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমাদের কেউ যখন ১০টি আয়াত শিখত, তখন তার অর্থ বুঝে আমল না করা পর্যন্ত সে সামনে অগ্রসর হতো না।’
(শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৮০১)
হাসান বসরি (রহ.) বলতেন, ‘তোমাদের আগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কোরআনকে তাঁদের প্রতিপালকের চিঠি (বা ফরমান) মনে করতেন। ফলে তাঁরা রাতে তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতেন এবং দিনে তা অনুসন্ধান করতেন।’ (আত তিবয়ান, পৃষ্ঠা-২৮)
৬. সিজদা করা : কোরআনের ১৪টি আয়াত পাঠ করার পর সিজদা দেওয়া ওয়াজিব। এসব আয়াত তিলাওয়াতের সঙ্গে সঙ্গে সিজদা দেওয়া ওয়াজিব। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর কাছে থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে এত ভিড় হতো যে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৭৬)
৭. সুললিত কণ্ঠে তিলাওয়াত করা : কোরআন পাঠের সময় মুমিনের অন্তরে যে ভাবাবেগের সৃষ্টি হয় তার কারণে মুমিনের কণ্ঠে সুরের সৃষ্টি হয়। ফলে সে আবেগ মেশানো সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত করে। বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, ‘আমি নবী (সা.)-কে এশার নামাজে সুরা তীন পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে কারো সুন্দর কণ্ঠ বা কিরাত শুনিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৬৯)
আল্লাহ সবাইকে হৃদয় খুলে কোরআন তিলাওয়াতের তাওফিক দিন। আমিন।