মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ওপর নির্ভর করছে বলে সতর্ক করেছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, “যদি আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত না করি এবং ইসরাইল ও আরব বিশ্বের মধ্যে সহাবস্থান না গড়ে তুলি, তাহলে গোটা অঞ্চল ধ্বংসের মুখে পড়বে।”
মিসরের শার্ম আল-শেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আগে বিবিসি প্যানোরামাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাদশাহ এই মন্তব্য করেন। এদিনই হামাস গাজা থেকে শেষ জীবিত ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে।
আবদুল্লাহ স্পষ্ট করে বলেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র কার্যকর পথ—যেখানে ইসরাইলের পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যথায়, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “আমরা আবারও একই সংঘাতের মুখোমুখি হব।”
বর্তমান ইসরাইলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করলেও, বাদশাহ মনে করেন এখনই শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার সময়। তিনি জানান, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গঠিত প্রক্রিয়া “বাস্তব শান্তির শেষ সুযোগ” হতে পারে, তবে “চুক্তির ভেতরেই লুকিয়ে আছে শয়তান”—অর্থাৎ সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সঠিকভাবে সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
ইরান-ইসরাইল সংঘাত ও হামাসের সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতা উল্লেখ করে বাদশাহ বলেন, “আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছে গেছি, যা শুধু এই অঞ্চল নয়, পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করছে।”
১৯৯৪ সালে জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়—যা আজও বহাল রয়েছে। জর্ডানের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত হওয়ায়, এই ইস্যু দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলছে।
নিজ জীবদ্দশায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেখতে চান কিনা—এ প্রশ্নে বাদশাহ বলেন, “আমাকে করতেই হবে, কারণ বিকল্প মানে হবে এই অঞ্চলের শেষ। আমার নাতি-নাতনিরা সেই শান্তির যোগ্য।”
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি অভিযানে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
বাদশাহ আবদুল্লাহর মতে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলমান শান্তি প্রক্রিয়া যদি বাস্তব অগ্রগতি অর্জন করতে পারে, তবে এটি “দীর্ঘ অস্থিরতার পর এক প্রকৃত সম্ভাবনার মুহূর্ত” হতে পারে—যদিও ইতিহাস এখনো তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা