ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে হত্যার আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার। এরপর তাকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এ ঘটনায় গ্রেফতার ১০ জনের তথ্য সাংবাদিকদের অবহিত করতে গিয়ে র্যাব-১৪ এর পরিচালক নাইমুল হাসান এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।
এরই মধ্যে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেনকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন কারখানার কোয়ালিটি ইনচার্জ এবং মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা নাইমুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত হয় ৪টার সময়। ফ্যাক্টরির ফ্লোর ইনচার্জ তাকে (দিপুকে) ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। ইস্তফা দেওয়ার পর উত্তেজিত জনতার কাছে সে (ফ্লোর ম্যানেজার) হ্যান্ডওভার করে দেয়। পুলিশের কাছে কেন দেয়নি, তার নিরাপত্তা কেন নিশ্চিত করেননি সেজন্য পাইওনিয়ার কারখানার দুজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বার বার চেষ্টা করেছি, কাকে বলেছে, কী বলেছে- এটা কিন্তু কেউ বলতে পারেনি। আমার মনে হয়, উত্তেজিত জনতা কিংবা পূর্বের কোনো শত্রুতা ছিল কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখব। একটা লোককে এই অভিযোগে মেরে ফেলা এবং গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই আইনে কভার করে না এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করে না।’
মামলা যেহেতু থানায় হয়েছে, ফলে থানাই এই মামলা তদন্ত করবে। পাশাপাশি র্যাবের ‘ছায়া-তদন্তের’ কথাও জানান পরিচালক নাইমুল হাসান।
গ্রেফতার অন্য আটজন হলেন- তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার, মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) এবং মো. নাজমুল।
শেষ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
র্যাব-১৪ এর পরিচালক নাঈমুল হাসান বলেন, এরা কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। বাকি আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকা উপজেলায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং অর্ধপোড়া লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে দিপুর ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন।