মেসিকে পাওয়ার পর ‘এক রাতেই বদলে গেল সব
২০২৩ সালে টানা কয়েক সপ্তাহ জল্পনার পর অবশেষে ৭ জুন ঘোষণা এল, ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিচ্ছেন লিওনেল মেসি। দুই বছরের প্যারিস সেন্ট জার্মেইর সঙ্গে চুক্তি শেষে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আসেন তিনি।
টোকিওতে থাকা বেকহ্যাম ভোর ৫টায় খবরটি পান। তিনি জানান, ফোনে অসংখ্য নোটিফিকেশন দেখে তার চোখে পানি এসে গিয়েছিল।
আসেঞ্জির ভাষায়, ‘এক রাতেই আমরা সাধারণ এমএলএস ক্লাব থেকে এমন এক ক্লাবে পরিণত হই, যাকে সারা বিশ্ব চেনে। ফিজি থেকে মঙ্গোলিয়া, সব জায়গায় ইন্টার মায়ামির নাম। সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
দলে পরে যোগ দেন মেসির পুরোনো বার্সা-সহযাত্রী জর্দি আলবা, সার্জিও বুসকেতস ও পরে লুইস সুয়ারেজ। কোচও পরিচিত মুখ, বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলেও ছিলেন সঙ্গী।
মায়ামির সঙ্গে মেসির চুক্তি বেড়ে এখন ডিসেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত। ক্লাব থেকে তার আয়ের পরিমাণ ৩৭–৪৫ মিলিয়ন পাউন্ডের মধ্যে। অ্যাডিডাসের জার্সি বিক্রি ও অ্যাপলের এমএলএস সিজন পাস সাবস্ক্রিপশন থেকেও বাড়তি আয় হয়।
আসেঞ্জি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, আর অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সেরা বাজার। তারপরও তাদের ফুটবল লিগ এখনো বিশ্বসেরাদের কাতারে নেই, এটা এক ধরনের বিস্ময়।’
মেসি যাদুতে ভিড় বাড়ল ২০ শতাংশ
মেসি আসার পর এমএলএস বিশ্ব ফুটবল আলোচনার অংশ হয়ে যায়। ইন্টার মায়ামির প্রায় সব ম্যাচ হাউসফুল। দলের সামাজিক মাধ্যমে অনুসারী সংখ্যা ২০ লাখ থেকে বেড়ে ৫ কোটিতে পৌঁছায়।
মেসির অভিষেকের পর এমএলএস–এর গড় দর্শকসংখ্যা বেড়ে যায় প্রায় ২০ শতাংশ। স্ট্রিমিংয়ে তার প্রথম ১০ ম্যাচেই দর্শকসংখ্যা দাঁড়ায় দিগুণে!
টিকিটের দামও হয়ে যায় আকাশছোঁয়া, আগে যে টিকিট ৪০ পাউন্ডে পাওয়া যেত, এখন তা ১৫০–২০০ পাউন্ড।
মেসি থাকায় অন্য দলগুলোও ঘরের মাঠ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে দর্শকের চাপে।
যেমন, ১৯ এপ্রিল কলম্বাস ক্রু নিজেদের হোম স্টেডিয়াম বদলে নিয়ে যায় ৬০ হাজার দর্শকধারণক্ষম ক্লিভল্যান্ডের হান্টিংটন ব্যাংক ফিল্ডে। সেটিও হয় হাউজফুল!
ক্লাবের বার্ষিক আয় ২০২২ সালের ৪১ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে ১৬০ মিলিয়ন পাউন্ডে দাঁড়ায়। মেসি ইফেক্টে ২০২৩–২৪ মৌসুমে এমএলএস দর্শকসংখ্যা ১ কোটি ১৪ লাখ ছাড়ায়।
অ্যাপল টিভির সিজন পাসে মেসির অভিষেকেই ৩ লাখ নতুন সাবস্ক্রাইবার যোগ হয়। মেসির ১০ নম্বর জার্সি বিক্রি লিগে সবার শীর্ষে, আর জার্সি বিক্রি বেড়েছে ৪১ শতাংশ।
ইন্টার মায়ামিকে স্বাগত জানিয়ে অন্যান্য ক্লাবও অতিরিক্ত ৬৩ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করেছে। গেট রিসিপ্ট বেড়েছে ১৭০০ শতাংশ, মোট আয় ১৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড।
আসেঞ্জি বলেন, ‘লিওকে কেউই প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। তার মতো আর কেউ হবে না। তবে আমরা এমন একটি ঐতিহ্য তৈরি করতে চাই, যেটি আবারও বড় খেলোয়াড়দের এই ক্লাবে টেনে আনবে।’
এই উদ্দেশ্যেই জুনিয়র পর্যায়ে ‘ড্রিমস কাপ’সহ নানা উদ্যোগ আছে, যা তরুণ ফুটবলার গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।
সেলিব্রিটিদের মিলনমেলা—ইন্টার মায়ামি
ইন্টার মায়ামির ম্যাচ মানেই এখন তারকাদের ভিড়। হলিউড তারকা উইল স্মিথ থেকে বক্সিং কিংবদন্তি ফ্লয়েড মেওয়েদার, এনএফএল তারকা টম ব্র্যাডি থেকে টেনিস তারকা আরিনা সাবালেঙ্কা সবাই উপস্থিত হন মেসির খেলা দেখতে।
লিওনেল রিচি, লেব্রন জেমস, কিম কার্দাশিয়ান, ইভা লংগোরিয়াদেরও দেখা পাওয়া যায় অহরহ। রোনালদিনহো–রবার্তো কার্লোসের মতো কিংবদন্তিরাও দেখা দেন, পাশে থাকেন সেরেনা উইলিয়ামসের মতো তারকা।
বেকহ্যাম প্রথম থেকেই বুঝেছিলেন, মায়ামির রঙ গোলাপি। শহরের আর্ট ডেকো স্থাপত্য, নিয়ন আলো, ফ্লেমিঙ্গো, উপকূল সবই এই গোলাপি রঙকে ঘিরে।
প্রথমে অনেকের রঙ নিয়ে আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনিই জিতলেন। গোলাপিই হলো ইন্টার মায়ামির পরিচয়—দুনিয়া দেখল একেবারে আলাদা এক ফুটবল ব্র্যান্ড।
২০২৩ সালে লিগস কাপ ও ২০২৪ সালের সাপোর্টার্স শিল্ড জয়ের পর এ বছর এসেছে সবচেয়ে বড় অর্জন, এমএলএস কাপের ট্রফি। গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটিকে ৫–১ গোলে হারিয়ে ইস্টার্ন কনফারেন্সের ফাইনাল জিতে নেয় মায়ামি, যা তাদের দ্বিতীয় বড় সাফল্য ছিল।
মেসির হাত ধরে আসছে নতুন স্টেডিয়াম
২০২৬ মৌসুমে নতুন ঘর—মায়ামি ফ্রিডম পার্কে খেলবে ইন্টার মায়ামি। ২০২০ সাল থেকে ক্লাবটি খেলছে ২১,৫০০ দর্শকের ফোর্ট লডারডেলের চেজ স্টেডিয়ামে। আগামী মৌসুমে স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রথম পাঁচ ম্যাচ বাইরে খেলবে মায়ামি।
নতুন স্টেডিয়াম চালু হলে ক্লাবের আয় আকাশছোঁয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আসেঞ্জির ভাষায়, ‘এই মৌসুমে আমাদের বাজেট ছিল ১৬০ মিলিয়ন ডলার। কয়েক বছরের মধ্যে তা ২৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
আসেঞ্জি আরো বলেন, ‘সব মিলিয়ে এটা একপ্রকার অলৌকিক ঘটনা। পাঁচ বছরের ক্লাব আমরা, কিন্তু ইতিহাস তৈরি করছি। লিওনেল মেসি অধিনায়ক হয়ে আমাদের পুরো যাত্রাকে বদলে দিয়েছেন।’