মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা

জাতীয় ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

বিশ্বজুড়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি বিজ্ঞাপন নয়, বাস্তব পরিবর্তনের মাধ্যমে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় মৌলিক রূপান্তর ঘটাতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল পুরস্কার এআইনির্ভর গবেষণার ওপর প্রদান এই প্রযুক্তির বৈশ্বিক স্বীকৃতির এক প্রতীক।

তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি এআই নিয়ে এসেছে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি। কর্মসংস্থান হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য, অ্যালগরিদমিক সিদ্ধান্তের নৈতিকতা, যুদ্ধক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহারসহ নানা উদ্বেগ বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারসের হিসাবে, ২০৩০ সালের মধ্যে এআই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ১৫.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত করলেও, গোল্ডম্যান স্যাক্সের পূর্বাভাস বলছে—একই সময়ে ৩০ কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হতে পারেন।

এই দ্বিমুখী বাস্তবতায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তৈরি হয়েছে নতুন এক সুযোগের জানালা। তরুণ ও প্রযুক্তি-উন্মুখ মানবসম্পদ এবং ক্রমবর্ধমান জ্ঞানসম্পদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ এআইকে প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত করতে পারে।

মানব উন্নয়নে এআইয়ের প্রভাব

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এআই-এর প্রয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মৌলিক পাঠদক্ষতা ও গ্রামীণ-শহুরে বৈষম্য হ্রাসে এআইভিত্তিক ব্যক্তিগত টিউটরিং, অভিযোজিত পাঠদান এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যকর হতে পারে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে টেলিমেডিসিন, স্বয়ংক্রিয় রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সহায়ক টুলস গ্রামীণ জনগণের জন্য নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে।

জলবায়ু অভিযোজন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এআই

জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশে এআই ব্যবহার করে উন্নত পূর্বাভাস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। ফিলিপাইন ও নেদারল্যান্ডসের উদাহরণ অনুসরণ করে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাসে এআই মডেল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কৃষি ও পানিসম্পদের সুষম বণ্টনেও এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় নীতিনির্ধারণ জরুরি

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এআইয়ে বিপুল বিনিয়োগ করে এগিয়ে গেলেও এখনো সময় আছে। কারণ, এআই মূলত হার্ডওয়্যার নয়, তথ্য, সৃজনশীলতা ও নীতিকেন্দ্রিক চিন্তার ওপর নির্ভরশীল প্রযুক্তি। ভারত ও চীনের মতো দেশ এ ক্ষেত্রেই নিজেদের কৌশলগত অবস্থান গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশও চাইলে শিক্ষানীতি, গবেষণায় বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিনির্ভর কৌশলের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের অংশীদার হতে পারে।

কী করতে হবে এখনই?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই বাংলাদেশকে কিছু কৌশলগত খাতে বিনিয়োগ করতে হবে:

  • শক্তিশালী এআই অবকাঠামো নির্মাণ

  • প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত একীভূত এআই শিক্ষা

  • নাগরিকবান্ধব এআই টুলস ও সচেতনতা

  • বাংলা ভাষাভিত্তিক এআই টুলস উন্নয়ন

  • আরএমজি ও অভিবাসন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার

  • কর্মশক্তির পুনঃদক্ষীকরণ (reskilling)

ড. সাজ্জাদ নাসির (টিএইচআইএ, যুক্তরাষ্ট্র) এবং ড. মো. মঈনুল আকবর (ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাস) এক যৌথ বিশ্লেষণে বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে এআই উদ্ভাবনের রূপকার হিসেবে তৈরি করতে এখনই কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু ব্যবহারকারী নয়, উদ্ভাবক হিসেবেও আত্মপ্রকাশের সময় এসেছে।”

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102