এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ অর্জন করে এবার মা-বাবার প্রত্যাশা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চান সদ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ সুফিয়ান বিন আজাদ।
আজ (বৃহস্পতিবার) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ প্রাঙ্গনে গিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থী সুফিয়ান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে।
এ সময় অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মেধাবী এই শিক্ষার্থী যুগান্তরকে জানায়, বাবা-মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ভালো চিকিৎসক হতে চান তিনি। আর এজন্য পরীক্ষার পর থেকেই মেডিকেল বিষয়ক পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন এই শিক্ষার্থী।
জানা যায়, সুফিয়ান বিন আজাদ রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করেছে। বাবা আবুল কালাম আজাদ পেশায় ঔষধ ব্যবসায়ী ও মা রেহেনা হাসানও চাকুরীজীবি। ছোট বোন তাসনিয়া আজাদ ক্যাডেট স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের পাশে জয়নাল মার্কেট এলাকার ভাড়া বাসায় বাবা-মায়ের সংসারে ছোট বোনের সাথেই সুফিয়ানের বেড়ে ওঠা।
সুফিয়ানের ফলাফল প্রকাশের এ দিন পুরো পরিবারটি এসেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে। এ সময় কথা হয় সুফিয়ানের মা রেহানা হাসানের সঙ্গে।
ছেলের ভালো ফলাফলের বিষয়ে যুগান্তরকে তিনি জানান, আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। সবার প্রথম আমি চাই ছেলে একজন ভালো মানুষ হোক। তারপর ওকে আমি ডাক্তার বানাতে চাই। যেন বড় হয়ে গরীব ও অভাবী মানুষের সেবা করতে পারে।
সুফিয়ানের পড়াশুনায় মনোযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মা রেহেনা হাসান জানায়, আমার স্বামী এবং আমি দুজনেই কাজের কারণে বাইরে থাকি। কলেজের বাইরে ওর (সুফিয়ান) বেশিরভাগ সময় একাই কেটেছে। আর এই সময়টাতে আমার ছেলে নিজ থেকেই পড়াশুনা করেছে। পড়াশুনার জন্য সুফিয়ানকে কখনো বলতেও হয়নি আমার। আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে পড়ালেখায় মনোযোগী।
কথা হয় সুফিয়ানের বাবা আবুল কালাম আজাদের সাথে। এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলে জিপিএ ৫ পাওয়ার আনন্দে এই বাবা বলেন, আনন্দ আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আনন্দে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। আমি আমার ছেলেকে মেয়েকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি জানান, সুফিয়ান যেন ডাক্তার হয় সেজন্য এইচএসসি পরীক্ষার পরই ওকে আমি মেডিকেল পড়াশোনার জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছি। আমি আমার মেয়েকেও চিকিৎসক বানাব ইনশাআল্লাহ।
এ দিন বড় ভাইয়ের এমন সাফল্যের স্বাক্ষী হতে পেরে ক্ষুদে শিক্ষার্থী তাসনিয়া আজাদ জানায়, আমিও বড় হয়ে ভাইয়ার মতো ব্রিলিয়্যান্ট হতে চাই। আমিও বড় হয়ে ডাক্তার হব।
এদিকে, ফলাফল ও ভবিষ্যৎ পড়াশুনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সদ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ সুফিয়ান বিন আজাদ জানায়, এই ফলাফলের জন্য সর্বপ্রথম আমি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই। আমার এই সাফল্যের পেছনে আমার আব্বু-আম্মুর দোয়া আছে। আমি অযথা আড্ডা কিংবা অলস সময় না কাটিয়ে সবসময় চেষ্টা করেছি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে।
সুফিয়ান জানায়, ভালো রেজাল্টের পেছনে স্যার-ম্যামদের অবদান অনেক বেশি। নিয়মিত ক্লাসে টিচাররা যেগুলো পড়িয়েছে আমাদের তা পরীক্ষায় খুব কাজে দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আমি ভালো মানুষ হব এবং মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে ডাক্তারি পড়াশোনা করব। চিকিৎসক হয়ে যেন দেশের মানুষকে সুচিকিৎসা দিতে পারি সেজন্য কাজ করব।
উল্লেখ্য, এ বছর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৬৯৩ জনের মধ্যে ১৬৯২ জন শিক্ষার্থীই সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসকৃত শিক্ষার্থীদের ১২১৮ জন জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান বিভাগের ১১৩৩ জন পরীক্ষার্থী মধ্যে ১১৩২ জন উত্তীর্ণ হয়। যার মধ্যে জিপি ৫ পেয়েছে ৯৬৩ জন। জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মাঝে সুফিয়ান বিন আজাদও একজন