দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসির পাসের হারে বড় ধস নেমেছে। এ বোর্ডে এবার পাসের হার ৫৭.৪৯ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৭৭.৫৬ শতাংশ। ফলে এ বছর পাসের হার কমেছে ২৭.০৭ শতাংশ।
এবার বোর্ডের ৬৬৬টি কলেজের মধ্যে ৪৩টি কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ২০। অন্যদিকে, শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা এবার ১১টি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মীর সাজ্জাদ আলী ফলাফলের এই চিত্র তুলে ধরেন।
জানা গেছে, দিনাজপুর বোর্ডের আওতায় থাকা রংপুর বিভাগের আট জেলার ৪৩টি কলেজ থেকে ১৮২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল, কিন্তু এদের মধ্যে কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে রংপুর জেলার ৪টি কলেজ থেকে অংশ নেওয়া ১৫ জন আছে।
এছাড়া নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন, কুড়িগ্রামের ৯টি কলেজের ৫৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৬টি কলেজের ২৫ জন, লালমনিরহাটের ৫টি কলেজের ১৪ জন, দিনাজপুরের ৪টি কলেজের ১৭ জন, পঞ্চগড়ের ৩টি কলেজের ১১ জন এবং গাইবান্ধার ২টি কলেজের ৬ জনের কেউ পাস করতে পারেনি।
যেসব কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ৯ জন, বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর বিলাতেরা হাইস্কুল ও কলেজের ৪ জন, পীরগাছা উপজেলার কান্দিরহাট স্কুল ও কলেজের ১ জন এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়াইবাড়ী কলেজের ১ জন।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বাগুলাগাড়ী স্কুল ও কলেজের ১৫ জন, চৌধুরানী হাই স্কুল ও কলেজের ৬ জন, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের ৩ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখান স্কুল ও কলেজের ৫ জন, ডিমলা উপজেলার নওতারা বালিকা স্কুল ও কলেজের ৩ জন, জিলা পরিষদ স্কুল ও কলেজের ২ জন, ডিমলা সীমান্ত কলেজের ২ জন, গয়াখড়িবাড়ী বালিকা কলেজের ২ জন, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপা সৃজনশীল কলেজের ১ জন এবং সাতপাই হাইস্কুল ও কলেজের ১ জন পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু কেউ পাস করেনি।
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার চার চর শৌলমারী আদর্শ মহিলা কলেজের ১৫ জন, টাপুর চর স্কুল ও কলেজের ৪ জন, ফুলবাড়ী উপজেলার রাশেদ খান মেনন কলেজের ১২ জন, রাজারহাট উপজেলার সিংড়া দাবড়িহাট কলেজের ১০ জন, নাগেশ্বরী উপজেলার চিলাখান মডেল কলেজের ৬ জন, কুটিপাড়া ডাঙ্গা স্কুল ও কলেজের ৩ জন, সমাজকল্যাণ মহিলা কলেজের ১ জন, উলিপুর উপজেলার বাগুয়া অনন্তপুর স্কুল ও কলেজের ২ জন এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ডোলডাঙ্গা স্কুল ও কলেজের ১ জন পরীক্ষার্থী ছিল। এদের সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর মহিলা কলেজের ৮ জন, আমানতুল্লাহ ইসলামিয়া একাডেমি স্কুল ও কলেজের ৫ জন, ঠাকুরগাঁও নিউ মডেল কলেজের ৪ জন, রানীশংকৈল উপজেলার গোগড় কলেজের ৫ জন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্নাই বাগুলাবাড়ী হাই স্কুল ও কলেজের ২ জন এবং পীরগঞ্জ উপজেলার এখতিয়াপুর শহীদ সালাহউদ্দীন স্কুল ও কলেজের ১ জন পরীক্ষায় অংশ নিলেও কেউ পাস করেনি।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সোনারজাট স্কুল ও কলেজের ৫ জন, শিয়ালখাওয়া কলেজের ৩ জন, দক্ষিণ ঘানাশ্যাম স্কুল ও কলেজের ২ জন, হাতিবান্ধা উপজেলার আমিনুর রহমান কলেজের ২ জন এবং আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী স্কুল ও কলেজের ২ জনের সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার কবিরাজহাট কলেজের ১০ জন, বিরামপুর উপজেলার বেপারীটোলা আদর্শ কলেজের ৩ জন, ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর লক্ষিপুর হাই স্কুল ও কলেজের ২ জন এবং হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় স্কুল ও কলেজের ২ জনের কেউ পাস করতে পারেনি।
পঞ্চগড় জেলার বোদা পাইলট বালিকা স্কুল ও কলেজের ৮ জন, তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজের ২ জন, বোদা উপজেলার মারেয়া মডেল হাই স্কুল ও কলেজের ১ জন এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গাগর হাই স্কুল ও কলেজের ৫ জন ও সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী মহিলা কলেজের ১ জন পরীক্ষার্থীর কেউ পাস করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৬০ হাজার ৮৮২ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৫২.৬৫ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৬১.৯২ শতাংশ।
এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৬০ জন, যেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২৯৫ জন। অর্থাৎ এ বছর জিপিএ-৫ কমেছে ৮ হাজার ৩৫ জন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয়ই কমেছে। এ বছর তুলনামূলকভাবে ইংরেজি বিষয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক দিয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৬ হাজার ২৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৭৭৪ জন এবং ছাত্রী ৩ হাজার ৪৮৬ জন।
বিভাগভিত্তিক ফলাফল- বিজ্ঞান বিভাগে ২৬ হাজার ১৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৬ জন, পাসের হার ৭৬.১২ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ৭৪ হাজার ৮০২ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৮ হাজার ২৪১ জন, পাসের হার ৫২.৫১ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭ হাজার ৬৯১ জনের মধ্যে পাস করেছে ৩ হাজার ১১৫ জন, পাসের হার ৪২.০৫ শতাংশ।