রাজধানীর নিকুঞ্জে সড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি ও সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিকুঞ্জ টানপাড়া এলাকার সরকার বাড়ি সড়কে কয়েক সপ্তাহ ধরে খোঁড়াখুড়ি ও সুয়ারেজ নির্মাণের কাজ চললেও কাজে ধীরগতির কারণে নিত্যদিনের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বিশেষ করে, ওই সড়কের আশপাশে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারখানা থাকায় ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শ্রমজীবি মানুষজনের চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে সুয়ারেজ লাইন নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মকে ঘিরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিকুঞ্জ টানপাড়া এলাকার সরকার বাড়ি মেইন রোডে চলছে সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ। এলাকার নাগরিক টিভি ভবনের সামনে থেকে শান্তির ছায়া পর্যন্ত মাত্র চার/পাঁচশো ফিট আয়তনের রাস্তায় উন্নয়ন কাজ চললেও নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে কাজটি ধীরগতিতে চলছে। এছাড়াও পানি সেচ না দিয়েই হাঁটু পানির নিচে সুয়ারেজ লাইনের সংযোগস্থলে ইটের গাঁথুনি বসিয়ে নামকাওয়াস্তে কাজ শেষ করার অভিযোগ ঠিকাদারী কোম্পানীর বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে মূল সুয়ারেজ লাইনের সংযোগস্থলে স্থায়ী আরসিসি পাইপের পরিবর্তে মানহীন প্লাস্টিক পাইপ বসানোর অভিযোগ জানিয়েছে বাসিন্দারা।
সড়ককে নির্মাণ কাজে ধীরগতি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা খায়ের মুন্সি জানায়, এই স্লো গতির নির্মাণ কাজের জন্য আমাদের বাচ্চাদের স্কুল-মাদ্রাসায় আসা যাওয়ায় খুব সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু এটা একটা অল্প আয়তনের রাস্তা তাই আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজটি করে দিক। এতে প্রতিদিনের চলাচলে আমরা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাব।
নিকুঞ্জ সরকার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ চাঁন মিয়া জানান, জায়গায় জায়গায় রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু, কাজ শেষ না হওয়ায় ড্রেনের নোংরা পানির দুর্গন্ধে হাটাচলায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে তো চলাচলের কোন পরিবেশই থাকে না। তখন আমাদেরকে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হয়।
এদিকে, ওই সড়কের সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। সড়কটিতে চলমান সুয়ারেজ নির্মাণ কাজের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে দেখা যায়, হাঁটু সমান পানির নিচে বালু ও সিমেন্টের মিশ্রণ ফেলে তার উপর একের পর এক ইট বসাচ্ছে শ্রমিকরা । এতে নির্মাণ পরবর্তী অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরো সুয়ারেজ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পরার শঙ্কা জানিয়েছে এলাকাবাসী। এছাড়াও সুয়ারেজ লাইনটির বিভিন্ন সংযোগস্থলে প্লাস্টিকের পাইপ বসাতেও দেখা গেছে। ফলে বড় ধরণের যানবাহন চলাচলে যেকোন মুহুর্তে পাইপ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানায়, আমার বাসার সামনে এক হাঁটু পানির নিচে শ্রমিকরা কোনরকম ফিনিশিং ছাড়াই বালু সিমেন্ট ফেলে তার উপর ইট বসাচ্ছে। এভাবে যদি তারা কাজ করে চলে যায় তাহলে কদিন পরেই তো এটা ভেঙ্গে যাবে। এরপর আমাদেরকেই জলাবদ্ধতা ও চলাচলে অসুবিধা পোহাতে হবে। একই অভিযোগ জানিয়েছে সরকার বাড়ি এলাকার একাধিক বাসিন্দা।
বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ, মূল সুয়ারেজ লাইনে রাস্তার উপরের পানি নামার জন্য সংযোগ লাইন বসানো হয়েছে সেটি প্লাস্টিকের পাইপ হওয়ায় এ ধরণের পাইপ যেকোন সময় যানবাহনের চাপে ভেঙ্গে যেতে পারে। তখন পানি জমে রাস্তা নষ্ট হওয়াসহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এখানে প্লাস্টিকের পাইপের পরিবর্তে আরসিসি পাইপ দেয়া দরকার ছিল।
সড়কে সুয়ারেজ লাইন নির্মাণে এমন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে গ্রিন কনস্ট্রাকশন নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পার্টনার পরিচয় দিয়ে মাহমুদ মোল্লা অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানায়, দিনের বেলায় পানির চাপ বেশি থাকার কারণে পানি জমে গেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এখন কাজ বন্ধ রেখেছি। রাতে পানি সেচ দিয়ে কাজ করব। এ সময় নিজেদের গাফিলতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জোন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. নুরুজ্জামান খান প্রতিবেদককে বলেন, পানির নিচে ইটের গাঁথুনি বসালে তো কদিন পরই ভেঙ্গে যাবে। যদি ওখানে এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ভেঙ্গে নতুন করে বানাতে হবে। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব। নির্মাণ কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, কাজটা এলাকাবাসীর অনুরোধে দু-মাসের মতো বন্ধ ছিল। সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ শেষে রাস্তার কাজ শীঘ্রই ধরা হবে বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি