গণভোট আয়োজনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে জটিলতায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মাঝপথে গণভোটের বিষয়টি সামনে আসায় কমিশন এখন কিছুটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণভোটের পদ্ধতি নির্ধারণ না হওয়াই বর্তমান জটিলতার মূল কারণ। এটি একাধিক ‘পয়েন্ট’ বা ‘ফিল্টারে’ হলে (যেমন পাঁচ বা সাতটি বিষয়) ভোট গ্রহণে সময় ও জটিলতা দুই-ই বাড়বে। এতে সাধারণ বা অক্ষরজ্ঞানহীন ভোটারদের জন্য ভোট প্রদান কঠিন হতে পারে।
কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজের কক্ষে গত রবিবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ব্যালট বাক্সের সংখ্যা, প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ এবং সম্ভাব্য বাজেট নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। তবে এখনো সরকার থেকে গণভোটের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পায়নি ইসি।
ইসির একাধিক সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে বড় পরিসরে ব্যয় সাশ্রয় সম্ভব। তবে ব্যালটে যদি একাধিক প্রশ্ন বা পয়েন্ট থাকে, তাহলে একদিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করা কঠিন হবে। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তাবিত দুই হাজার কোটি টাকার বিপরীতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে; গণভোটের বাজেট এখনো নির্ধারিত হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোও গণভোট নিয়ে বিভক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি ও সমমনা জোট একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের দাবি জানালেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আলাদা তারিখে গণভোট চায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে—একই কেন্দ্র, কর্মকর্তা ও ব্যালট বাক্স ব্যবহার করে। অপরদিকে, জামায়াতের প্রস্তাব নভেম্বরে পৃথকভাবে গণভোট আয়োজনের।
নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করে বলেছেন, অতিরিক্ত ব্যয় এড়াতে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনই যুক্তিসঙ্গত। এতে নির্বাচনের সময়সূচিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীর মতে, জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে চাইলে সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়াই শ্রেয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে—১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে। এবারের গণভোট আয়োজন নিয়ে তাই প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক—সব দিকেই নতুন এক পরীক্ষার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন।