টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার জন্য চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইসরাইলি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জোয়েল মকিয়র, ফ্রান্সের ফিলিপ আগিয়োঁ ও কানাডার পিটার হাউইট। সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
স্টকহোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
নোবেল কমিটি জানায়, ‘প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্তগুলো নির্ধারণে অবদানের’ জন্য মকিয়র এ পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন। আর ‘সৃজনশীল বিনাশের মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব উপস্থাপনের’ জন্য আগিয়োঁ ও হাউইট যৌথভাবে অবশিষ্ট অর্ধেক পুরস্কার পেয়েছেন।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান জন হাসলার সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা তাদের গবেষণা দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং কীভাবে এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী রাখা সম্ভব।
এক বিবৃতিতে নোবেল কমিটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মকিয়র ‘ঐতিহাসিক সূত্র ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, কীভাবে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক বা নিয়মিত বিষয় হয়ে ওঠেছে’।
অন্যদিকে আগিয়োঁ ও হাউইট ‘সৃজনশীল বিনাশ’ ধারণাটি বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, যখন নতুন ও উন্নত কোনো পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে না। এই প্রক্রিয়াই অর্থনীতিতে ‘সৃজনশীল বিনাশ’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ পুরনো ব্যবস্থার ভেতর থেকেই নতুন উদ্ভাবন হয়।
অর্থনীতিতে নোবেল সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৬ সালের উইলে উল্লেখিত মূল পাঁচটি পুরস্কারের অংশ নয়। আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুদানে এ পুরস্কার চালু করা হয়। তাই এটা নোবেল পুরস্কারের কেতাবি নাম। তবে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানের মতোই রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসই বিজয়ীদের নির্বাচন করে এবং একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
অর্থনীতিতে এই পুরস্কারের মাধ্যমে চলতি বছরের নোবেল মৌসুমের সমাপ্তি ঘটলো। এবার চিকিৎসায় মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা, পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিকসের ব্যবহারিক প্রয়োগ এবং রসায়নে নতুন আণবিক গঠন প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাস্নাহোরকাই, যার রচনায় উত্তর-আধুনিক যুগের হতাশা ও নৈরাশ্যের প্রতিফলন পাওয়া যায়। আর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো, যিনি পুরস্কারটি উৎসর্গ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
এ বছর নোবেল বিজয়ীরা আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোম ও অসলোতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করবেন। নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। প্রতিটি নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদপত্র এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলারের চেক প্রদান করা হবে। কোনো বিভাগে একাধিক বিজয়ী হলে পুরস্কারের অর্থ ভাগ করে দেওয়া হবে।