সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ, দেশের অন্যতম স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা।
ফ্যাক্টওয়াচের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও বিভ্রান্তিকরভাবে সম্পাদনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।
সংস্থাটি জানায়, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওটিতে এটিএন নিউজের একটি প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশ ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়— প্রধান উপদেষ্টা পদে আর থাকছেন না ড. ইউনূস এবং তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি।
তবে ফ্যাক্টওয়াচের যাচাইয়ে দেখা যায়, মূল প্রতিবেদনের পরবর্তী অংশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল— এই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও গুজব, এবং প্রতিবেদনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বিষয়টির সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছিল।
অর্থাৎ, বিভ্রান্তিকর ভিডিও তৈরির সময় মূল প্রতিবেদনের পরের অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়, যাতে সংবাদটি বিকৃত রূপে উপস্থাপিত হয়। ফ্যাক্টওয়াচ তাদের বিশ্লেষণে এ ঘটনাকে “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রচেষ্টা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ভিডিওটির বিভিন্ন কী ফ্রেম বিশ্লেষণ ও রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফ্যাক্টওয়াচ নিশ্চিত হয় যে, এটি ১ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত এটিএন নিউজের একটি প্রতিবেদন থেকে সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল—
“গত ২৭ আগস্ট চীন সফর শেষে দেশে ফেরেন সেনাপ্রধান। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন ওঠে, সেনাপ্রধান গোপনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং প্রধান উপদেষ্টার পদে পরিবর্তন আসতে পারে।”
তবে প্রতিবেদনের মূল অংশে এসব গুজবের কোনো সত্যতা নেই বলে জানানো হয়েছিল।
ফ্যাক্টওয়াচের বিশ্লেষণে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রায় এক মাস পুরোনো ওই প্রতিবেদনকে আংশিকভাবে কেটে নতুনভাবে প্রচার করা হয়েছে, যাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষ ভুল তথ্য বিশ্বাস করে।
সংস্থাটি জানায়, “পুরোনো প্রতিবেদনের একটি অংশ নতুনভাবে প্রচার করে সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি এক ধরনের বিকৃত ও অপতথ্য প্রচারণা।”
উল্লেখ্য, ফ্যাক্টওয়াচ হলো একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান, যা লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিকাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (CQS) কর্তৃক পরিচালিত। সংস্থাটি বাংলাদেশের ভুয়া খবর, গুজব ও অপতথ্য প্রতিরোধে নিয়মিতভাবে কাজ করছে এবং জনগণের কাছে সত্য ও যাচাই করা তথ্য পৌঁছে দিতে সচেষ্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিকর ভিডিও ও ভুয়া খবরের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ফ্যাক্টওয়াচ তাদের নজরদারি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।