বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩০৬ জন মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ বেশি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৭৫। এমনকি এই সাত মাসেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে গত পুরো বছরের রিপোর্ট হওয়া ২৩৪টি ঘটনাকে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শিকারদের মধ্যে ৪৯ জনের বয়স ০–৬ বছর, ৯৪ জনের বয়স ৭–১২ বছর এবং ১০৩ জন কিশোরী। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে মার্চ (১০৬টি) ও এপ্রিল (৬৪টি) মাসে। সাত মাসে মোট ২৫১টি ঘটনায় মামলা হলেও ৫৫টি শিশু এখনো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।
একই সময়ে ৩০ জন ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা গত বছরের মোট সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি। অধিকাংশ ঘটনায় মামলা হয়নি। এছাড়া ১২৯ জন মেয়েশিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে এবং ৪৯ জনকে পথেঘাটে উত্ত্যক্ত, ২২ জন শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
আইন বিশেষজ্ঞ আয়েশা আক্তার জানান, সামাজিক কুসংস্কার, পারিবারিক চাপ ও দুর্বল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে অনেক ঘটনা প্রকাশই পায় না। তদন্তে বিলম্ব ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা ও জবাবদিহির অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। “যখন শাস্তির ভয় থাকে না, তখন অপরাধই হয় নিরাপদ বিকল্প,”—বলেন তিনি।
এদিকে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা শিশু সুরক্ষায় পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, “শিশুদের ব্যক্তিগত সীমারেখা শেখানো ও স্কুলে সেফটি এডুকেশন চালু করা এখন সময়ের দাবি।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কেবল আইন প্রণয়ন নয়, কার্যকর প্রয়োগ, দ্রুত বিচার, সাক্ষী সুরক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা—সব ক্ষেত্রেই সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও বাস্তবতা বলছে, শিশুরা এখনো নিরাপদ নয়।