তিন শ্রেণির মানুষ এমন রয়েছে যাদের প্রতি আল্লাহর কঠোর গজবের ঘোষণা এসেছে। আবু হুরাইরাহ (রা) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ثَلاَثَةٌ لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ رَجُلٌ كَانَ لَهُ فَضْلُ مَاءٍ بِالطَّرِيقِ فَمَنَعَهُ مِنْ ابْنِ السَّبِيلِ وَرَجُلٌ بَايَعَ إِمَامًا لاَ يُبَايِعُهُ إِلاَّ لِدُنْيَا فَإِنْ أَعْطَاهُ مِنْهَا رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطِهِ مِنْهَا سَخِطَ وَرَجُلٌ أَقَامَ سِلْعَتَهُ بَعْدَ الْعَصْرِ فَقَالَ وَاللهِ الَّذِي لاَ إِلٰهَ غَيْرُهُ لَقَدْ أَعْطَيْتُ بِهَا كَذَا وَكَذَا فَصَدَّقَهُ رَجُلٌ ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ ( إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً
‘কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
এক ব্যক্তি- যার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আছে, অথচ সে মুসাফিরকে তা দিতে অস্বীকার করে। অন্য একজন সে ব্যক্তি, যে ইমামের হাতে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে বায়‘আত হয়। যদি ইমাম তাকে কিছু দুনিয়াবী সুযোগ দেন, তাহলে সে খুশী হয়, আর যদি না দেন তবে সে অসন্তুষ্ট হয়। অন্য একজন সে ব্যক্তি, যে আসরের সালাত আদায়ের পর তার জিনিসপত্র (বিক্রয়ের উদ্দেশে) তুলে ধরে আর বলে যে, আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া অন্য কোন মাবূদ নেই, আমার এই দ্রব্যের মূল্য এত এত দিতে আগ্রহ করা হয়েছে।
(কিন্তু আমি বিক্রি করিনি) এতে এক ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করে (তা ক্রয় করে নেয়)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন:
إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلاً
‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে’’- (আলে ইমরান ৭৭)।’ (বুখারি, হাদিস: ২৩৫৮)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণীর লোকের দিকে দৃষ্টি দেবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
প্রথমত : সেই ব্যক্তি, যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রয়েছে, অথচ পথিক বা মুসাফিরকে তা দিতে অস্বীকার করে।
পানি মানুষের মৌলিক অধিকার। তৃষ্ণার্তকে বঞ্চিত করা কেবল কৃপণতাই নয়, বরং এটি মানবিকতার চরম অবমাননা।
দ্বিতীয়ত : সেই ব্যক্তি, যে ইমামের (নেতা বা শাসক) হাতে বায়আত করে শুধুই দুনিয়ার স্বার্থে। যদি তার কাছে দুনিয়াবী সুযোগ আসে, সে খুশি হয়; আর না এলে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে। অথচ বায়আতের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা, কেবল দুনিয়ার মোহ নয়।
তৃতীয়ত : সেই ব্যবসায়ী, যে আসরের নামাজের পর দোকান খুলে মিথ্যা কসম খায়— “আল্লাহর কসম, এ পণ্যের এত দাম উঠেছিল, কিন্তু আমি বিক্রি করিনি।” এতে ক্রেতা প্রতারিত হয়ে তা কিনে নেয়। আল্লাহর নামকে মিথ্যা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা মহাপাপ।
এই হাদিস আমাদের শেখায় যে, মানবিক দায়িত্বে অবহেলা, দ্বীনকে দুনিয়ার স্বার্থে ব্যবহার এবং ব্যবসায় মিথ্যা কসমের আশ্রয়—এই তিনটি কাজ মানুষের ঈমান ও আমলকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহর রহমত ও দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়া মানে চূড়ান্ত ধ্বংস।
এ জাতীয় আরো খবর..