বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন

বিপদে মুমিনের দৃঢ়তা, মুনাফিকের পতন

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মানুষের জীবন কখনো শান্তির আবার কখনো ঝঞ্ঝার। এই উত্থান-পতনের ভেতরেই মুমিন আর মুনাফিকের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মুমিন বিপদে নুইয়ে পড়লেও আবার ঈমানের জোরে দাঁড়িয়ে যায়; আর মুনাফিক দৃশ্যত দৃঢ় হলেও এক ঝটকায় উপড়ে যায়। রাসুলুল্লাহ  (সা.) এ পার্থক্যকে এক অনন্য উপমার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

কাব (রা.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 

مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَالْخَامَةِ مِنَ الزَّرْعِ تُفَيِّئُهَا الرِّيحُ مَرَّةً وَتَعْدِلُهَا مَرَّةً وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ كَالأَرْزَةِ لاَ تَزَالُ حَتّٰى يَكُونَ انْجِعَافُهَا مَرَّةً وَاحِدَةً 

‘মুমিন ব্যক্তির উদাহরণ হলো শস্যক্ষেতের নরম চারা গাছের মতো, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেকবার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত, ভূমির ওপর শক্তভাবে স্থাপিত বৃক্ষ, যাকে কিছুতেই নোয়ানো যায় না। শেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উপড়ে যায়।’ (বুখারি: হাদিস : ৫৬৪৩)

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা: 

রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিন ও মুনাফিকের অবস্থাকে দুটি ভিন্ন গাছের দৃষ্টান্তে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন:

মুমিনের উদাহরণ নরম চারা গাছের মতো

মুমিন হলো সেই নরম চারা গাছের মতো, যেটি বাতাসে একবার বেঁকে যায়, আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

এর মানে হলো, মুমিন ব্যক্তি দুনিয়ার পরীক্ষায়, দুঃখ-কষ্টে, বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো সে সাময়িকভাবে কষ্টে নুইয়ে পড়ে, দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়, কিন্তু আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ভরসা তাকে পুনরায় দৃঢ় করে তোলে। বিপদ-আপদে মুমিনের মন ভেঙে পড়ে না; বরং সেগুলো তার ঈমানকে শাণিত করে, তাকে আরও দৃঢ় ও পরিণত করে তোলে। 

আলেমদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মুমিন মানুষ জীবনে বারবার বিপদের সম্মুখীন হয়, কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক রোগ-শোক, দারিদ্র্য বা শত্রুর আক্রমণ আসে।

কিন্তু সে সবকিছুতে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে এবং শেষে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেন। 

মুমিন জীবনে পরীক্ষা আসবেই। আল্লাহ নিজেই বলেছেন:

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা বাকারা: ১৫৫)

মুমিনের জীবনে বিপদ-আপদ আসা মানে তার ধ্বংস নয়; বরং তা তার ঈমানের দৃঢ়তার পরীক্ষা। অপরদিকে মুনাফিকের ভেতরে বিশ্বাস না থাকায় বিপদ এলে তারা টিকে থাকতে পারে না।

 

মুনাফিকের উদাহরণ দৃঢ় বৃক্ষের মতো

মুনাফিকের তুলনা করা হয়েছে সেই দৃঢ় বৃক্ষের সঙ্গে, যেটি মাটির ওপর শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, বাতাসে বাঁকেও না।

এর মানে হলো, মুনাফিক মনে হয় শক্তিশালী, অহংকারী ও আপাতদৃষ্টিতে অটল। কিন্তু আসলে তার অন্তরে ঈমান নেই, তাই যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব বা ধ্বংস নেমে আসে, তখন সে একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অর্থাৎ, মুনাফিকরা বিপদ-আপদে ধৈর্য ধরতে পারে না, বরং আল্লাহর আজাব তাদেরকে একেবারে মূল থেকে উপড়ে ফেলে দেয়।

আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়

* বিপদকে ধ্বংস মনে না করে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে নিতে হবে।

* ধৈর্য, দোয়া ও আল্লাহর প্রতি আস্থা—এই তিনটি মুমিনকে আবার দৃঢ় করে তোলে।

* মুমিনের শক্তি হলো তার নম্রতা, বিনয় ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা।

* মুনাফিকের পরিণতি হলো মূলসহ উপড়ে যাওয়া—এটা একদিকে সতর্কবার্তা, অন্যদিকে ঈমানকে খাঁটি করার প্রেরণা।

এই হাদিস মুমিনকে শিক্ষা দেয় যে, বিপদে নুইয়ে পড়লেও হতাশ নয়, বরং ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে দাঁড়াতে হবে। আর মুনাফিকের শিক্ষা হলো; অহংকার ও অটলতার ভান কোনো কাজে আসবে না, আল্লাহর আজাব এলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102