মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার শেষ সাক্ষী হিসেবে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তিনি আংশিক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে নাহিদ বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তার মতে, এই বক্তব্যই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের বৈধতা তৈরি করে দেয়। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্যে সারাদেশের ছাত্রসমাজ অপমানিত হয় এবং সেদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন।
জবানবন্দিতে নাহিদ আরও জানান, ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে ছাত্রলীগই আন্দোলন ঠেকাতে যথেষ্ট। এরপর ১৬ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ওইদিন পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ অন্তত ছয়জন নিহত হন। ১৭ জুলাই গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু রাতেই দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
১৮ জুলাই সারা দেশের ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে অংশ নেন। ওইদিন অসংখ্য মানুষ আহত ও নিহত হন। রাতে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামীপন্থী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরতদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায়। নাহিদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই সময় সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং হতাহতের খবর প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
এই মামলায় এর আগে ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত টানা তার সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি মামলার আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন ইতোমধ্যেই ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারও তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য উপস্থাপন শেষ হবে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে মামলাটি শুনানির সমাপ্তির দিকে এগোবে।