বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন

মহানবী (সা.)-এর জীবন : শৈশবের পবিত্রতা থেকে নবুওয়াতের মহিমা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বিভিন্ন মানুষের জীবনের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সদগুণের বিকাশ ঘটলেও সেই সমস্ত গুণের পরিপূর্ণতা ও চূড়ান্ত উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল কেবল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সমগ্র অস্তিত্বে। তিনি ছিলেন চিন্তা-চেতনার যথার্থতা, প্রজ্ঞার দীপ্তি এবং ন্যায়পরায়ণতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন সুষম দেহসৌষ্ঠব, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, প্রজ্ঞার পূর্ণতা এবং উদ্দেশ্য সাধনে সাফল্যের নিশ্চয়তা। দীর্ঘ সময় নীরবতা অবলম্বন করে তিনি ধ্যান ও অনুসন্ধানে নিমগ্ন থাকতেন, বিষয়-সম্পর্কিত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দিক নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন এবং ন্যায় ও সত্যের সন্ধান করতেন।তাঁর সূক্ষ্মদৃষ্টি, নিখুঁত পর্যবেক্ষণ এবং নির্ভুল বিশ্লেষণ ক্ষমতার দ্বারা তিনি মানবসমাজের প্রকৃত অবস্থা, গোত্রসমূহের প্রবণতা, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও মানসিকতার সঠিক উপলব্ধি করতে পারতেন। এর ফলে তিনি অন্যায়-অশ্লীলতা ও অনাচারে পরিবেষ্টিত সমাজে থেকেও সবকিছুর ঊর্ধ্বে, নির্মল ও পবিত্র জীবনযাপন করতে পেরেছেন।শরাবপায়ী সমাজে থেকেও তিনি কখনো শরাব বা মদ পান করেননি, দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে যবেহকৃত পশুর মাংস কখনো গ্রহণ করেননি এবং মূর্তিপূজার নামে আয়োজিত কোনো খেলাধুলা বা অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। শৈশবকাল থেকেই তিনি জাহেলিয়াতের মিথ্যা উপাস্যদের ঘৃণা করতেন; লাত ও উযযার নামে শপথ উচ্চারিত হলে তাঁর কানে সহ্য হতো না।

“তুমি আমার ছাগলগুলো দেখো, আমি মক্কায় যাই এবং সেখানকার যুবকদের মতো তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিই।”
কিন্তু পথিমধ্যে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে তিনি সেখানে বসে পড়লেন। তখনই আল্লাহ তাঁর শ্রবণশক্তি বন্ধ করে দিলেন, ফলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এবং পরের দিনের সূর্যের তাপে জাগ্রত হলেন। একই ঘটনা দ্বিতীয় বারেও ঘটল।এরপর আর কোনোদিন তাঁর মনে জাহেলিয়াতের এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার চিন্তাও জাগেনি।

সহীহ বুখারীতে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন— যখন কাবা ঘর পুনর্নির্মাণ হচ্ছিল, নবী কারীম (সা.) ও আব্বাস (রা.) পাথর বহন করছিলেন। আব্বাস (রা.) তাঁকে বললেন, “আপনার লুঙ্গি কাঁধে তুলে নিন, এতে ভার বহনের কষ্ট কমবে।” এই বলে তিনি ভাতিজার লুঙ্গি খুলতে গেলেই তিনি (নবী) পড়ে গেলেন, দৃষ্টি আকাশের দিকে চলে গেল এবং অজ্ঞান হয়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরতেই তিনি বলতে লাগলেন— “আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি।” সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লুঙ্গি বেঁধে দেওয়া হলো। অন্য বর্ণনায় এসেছে— এরপর আর কখনো তাঁর লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়নি।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র ছিল সর্বোত্তম ও সর্বাধিক আকর্ষণীয়। তিনি ছিলেন শিষ্টাচারী, নম্র-ভদ্র, সদালাপী ও সদাচারী। তাঁর হৃদয় ছিল দয়াময়, দৃষ্টি ছিল সুদূরপ্রসারী, অন্তর্দৃষ্টি ছিল সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ। তিনি ছিলেন সত্যবাদিতার প্রতীক— মিথ্যা কখনো তাঁর সন্নিকটে আসেনি। এ জন্যই তিনি সমগ্র আরববাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন “আল-আমীন”— সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আরববাসীগণের মধ্যে সব চাইতে নির্ভরযোগ্য আমানতদার। খাদীজাহ (রা.) সাক্ষ্য দিতেন যে, ‘তিনি অভাবগ্রস্তদের বোঝা বহন করতেন, নিঃস্ব ও অসহায়দের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করতেন। ন্যায্য দাবীদারদের তিনি সহায়তা করতেন এবং অতিথি পরায়ণতার জন্য মশহুর ছিলেন।

আলোচনা ও অনুধাবনের সুবিধার্থে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পয়গম্বরী জীবনকালকে আমরা মূলত দুইটি ভাগে বিভক্ত করে দেখতে পারি— কর্মধারা ও সাফল্যের ধারা। সাফল্যের প্রেক্ষাপটে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই দুই অংশ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও পরস্পর স্বতন্ত্র। অংশ দুটি হলো যথাক্রমে—

১. মক্কায় অবস্থানকাল — প্রায় তের বছর।

২. মদীনায় অবস্থানকাল — প্রায় দশ বছর।

মক্কী ও মাদানী এই দুই জীবনপর্ব বৈশিষ্ট্য, কর্মপদ্ধতি এবং কার্যপ্রক্রিয়ার দিক থেকে ভিন্নধর্মী হলেও ক্রমবিকাশে পরস্পর সংযুক্ত ও ধারাবাহিক। মহানবী (সা.)-এর সমগ্র পয়গম্বরী জীবন পর্যালোচনা করলে এই স্তরভাগ অনুযায়ী তা উপলব্ধি ও বিশ্লেষণ অনেকাংশে সহজ হয়ে ওঠে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কী জীবনের দাওয়াতী কর্মকাণ্ডকে মূলত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো—

১. সাধারণ মানুষের অবগতির বাইরে গোপন দাওয়াত ও তাবলিগের ধাপ (প্রথম তিন বছর)।

২. মক্কার জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য দাওয়াত ও প্রচারণার ধাপ (নবুওয়াতের ৪র্থ বছর থেকে ১০ম বছরের শেষ পর্যন্ত)।

৩. মক্কার সীমানা অতিক্রম করে বাইরের অঞ্চলসমূহে ইসলামের দাওয়াত বিস্তারের ধাপ (নবুওয়াতের ১০ম বছরের শেষ ভাগ থেকে হিজরত পর্যন্ত)।

অপরদিকে, মদীনায় অবস্থানকালীন জীবন ও কর্মকাণ্ডকে স্তরানুযায়ী বিশ্লেষণ করলে আরও বিস্তৃত চিত্র পাওয়া যায়। তাই মক্কী জীবনের এই ধাপগুলো আলোচনা শেষে মদীনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও কার্যপদ্ধতির স্তরভিত্তিক আলোচনা সন্নিবেশিত হবে ইনশাআল্লাহ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102