রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র ছিল সর্বোত্তম ও সর্বাধিক আকর্ষণীয়। তিনি ছিলেন শিষ্টাচারী, নম্র-ভদ্র, সদালাপী ও সদাচারী। তাঁর হৃদয় ছিল দয়াময়, দৃষ্টি ছিল সুদূরপ্রসারী, অন্তর্দৃষ্টি ছিল সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ। তিনি ছিলেন সত্যবাদিতার প্রতীক— মিথ্যা কখনো তাঁর সন্নিকটে আসেনি। এ জন্যই তিনি সমগ্র আরববাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন “আল-আমীন”— সর্বাধিক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আরববাসীগণের মধ্যে সব চাইতে নির্ভরযোগ্য আমানতদার। খাদীজাহ (রা.) সাক্ষ্য দিতেন যে, ‘তিনি অভাবগ্রস্তদের বোঝা বহন করতেন, নিঃস্ব ও অসহায়দের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করতেন। ন্যায্য দাবীদারদের তিনি সহায়তা করতেন এবং অতিথি পরায়ণতার জন্য মশহুর ছিলেন।
আলোচনা ও অনুধাবনের সুবিধার্থে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পয়গম্বরী জীবনকালকে আমরা মূলত দুইটি ভাগে বিভক্ত করে দেখতে পারি— কর্মধারা ও সাফল্যের ধারা। সাফল্যের প্রেক্ষাপটে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই দুই অংশ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও পরস্পর স্বতন্ত্র। অংশ দুটি হলো যথাক্রমে—
১. মক্কায় অবস্থানকাল — প্রায় তের বছর।
২. মদীনায় অবস্থানকাল — প্রায় দশ বছর।
মক্কী ও মাদানী এই দুই জীবনপর্ব বৈশিষ্ট্য, কর্মপদ্ধতি এবং কার্যপ্রক্রিয়ার দিক থেকে ভিন্নধর্মী হলেও ক্রমবিকাশে পরস্পর সংযুক্ত ও ধারাবাহিক। মহানবী (সা.)-এর সমগ্র পয়গম্বরী জীবন পর্যালোচনা করলে এই স্তরভাগ অনুযায়ী তা উপলব্ধি ও বিশ্লেষণ অনেকাংশে সহজ হয়ে ওঠে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কী জীবনের দাওয়াতী কর্মকাণ্ডকে মূলত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো—
১. সাধারণ মানুষের অবগতির বাইরে গোপন দাওয়াত ও তাবলিগের ধাপ (প্রথম তিন বছর)।
২. মক্কার জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য দাওয়াত ও প্রচারণার ধাপ (নবুওয়াতের ৪র্থ বছর থেকে ১০ম বছরের শেষ পর্যন্ত)।
৩. মক্কার সীমানা অতিক্রম করে বাইরের অঞ্চলসমূহে ইসলামের দাওয়াত বিস্তারের ধাপ (নবুওয়াতের ১০ম বছরের শেষ ভাগ থেকে হিজরত পর্যন্ত)।
অপরদিকে, মদীনায় অবস্থানকালীন জীবন ও কর্মকাণ্ডকে স্তরানুযায়ী বিশ্লেষণ করলে আরও বিস্তৃত চিত্র পাওয়া যায়। তাই মক্কী জীবনের এই ধাপগুলো আলোচনা শেষে মদীনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও কার্যপদ্ধতির স্তরভিত্তিক আলোচনা সন্নিবেশিত হবে ইনশাআল্লাহ।