ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন এ প্রাণহানির ঘটনায় এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে। নিহতদের মধ্যে ৯৮ জনই শিশু।
শনিবার (৯ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত এবং আরও ৪৯১ জন আহত হয়েছেন। এরই মধ্যে ইসরায়েল গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এবং শহরটি খালি করার জন্য ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
গত শুক্রবার অনুমোদিত নতুন পরিকল্পনায় গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য পাঁচটি ‘মূলনীতি’ উল্লেখ করেছে ইসরায়েল, যার একটি হলো পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ধাপে গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে থাকা প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে দেওয়া হবে।
এ পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলসহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। কিছু সামরিক কর্মকর্তা ও গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা বন্দিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এতে তাদের সংকল্প দুর্বল হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুলনামূলক নরম সুরে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা সম্পূর্ণ দখল করা হবে কি না, তা “প্রায় পুরোপুরি ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত”।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, নেতানিয়াহুর সরকার আগামী ৭ অক্টোবর থেকে গাজা সিটিতে সামরিক অবরোধ শুরু করবে। এর আগে দুই মাসের মধ্যে সেখানে থাকা প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা গাজা উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
যুদ্ধ শুরুর আগে গাজা সিটিতে প্রায় ৬ লাখ মানুষের বসবাস ছিল। যুদ্ধের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন অনেকেই একাধিকবার ঘর হারিয়ে তাঁবু কিংবা আংশিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবনে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, এ পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই চরম কষ্টে থাকা মানুষের ওপর আরও ভয়াবহ দুর্ভোগ বয়ে আনবে। জাতিসংঘের সহায়তায় কাজ করা খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় এখন “দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি” বিরাজ করছে।
খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় খাদ্য সংগ্রহের পথে ২১ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানায়, মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) চালু হওয়ার পর থেকে খাদ্য সংগ্রহের পথে ১,৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে এবং ৫১৪ জন খাদ্যবাহী বহরের পথে প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘের দাবি, নিহতদের অধিকাংশকে ইসরায়েলি সেনারা হত্যা করেছে। তবে জিএইচএফ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।