ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ঘোষণা পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী শাসন, ভোটাধিকার হরণ, সাংবিধানিক অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত এই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা জাতির গৌরব এবং তাঁদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করা হলো। শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা ও অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতাকে আইনগত সুরক্ষাও দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সূচনা ও এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়।
১. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী ঐতিহ্যের স্বীকৃতি।
২. সাম্য, মর্যাদা ও সুবিচারের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জনগণের ত্যাগ স্বীকার।
৩. ১৯৭২ সালের সংবিধানের দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা।
৪. বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ।
৫. ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক স্বৈরাচার পতনের ইতিহাস।
৬. ১/১১ পরবর্তী পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয়।
৭. আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি শাসনে সংবিধান ও গণতন্ত্রের অপব্যবহার।
৮. গুম, খুন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র।
৯. দেশকে ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিযোগ।
১০. অর্থনীতি ধ্বংস, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং পরিবেশ সংকটের বিবরণ।
১১. জনগণের উপর দমন-পীড়ন, আন্দোলনকারীদের ওপর নিপীড়নের চিত্র।
১২. বিদেশি প্রভুত্ব মেনে নিয়ে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান।
১৩. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪—তিনটি ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকা।
১৪. ভিন্নমতের প্রতি নিপীড়ন, কোটানীতির বৈষম্য ও তরুণদের বঞ্চনার চিত্র।
১৫. বিরোধী দল ও আন্দোলনকারীদের দমন-পীড়নে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ।
১৬. ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও তার বর্বর দমন।
১৭. আন্দোলনে সারা দেশের জনগণের অংশগ্রহণ ও ফ্যাসিস্ট বাহিনীর নির্মমতা।
১৮. গণভবনমুখী লংমার্চ ও শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ।
১৯. আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ ও যুক্তিসঙ্গত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকৃতি দাবি।
২০. ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন।
২১. একটি বৈষম্য, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদমুক্ত সমাজ নির্মাণের প্রত্যয়।
২২. রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের অঙ্গীকার।
২৩. গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দৃঢ় প্রত্যয়।
২৪. জুলাই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা এবং আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা।
২৫. সংস্কারপন্থী সংবিধানের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতি।
২৬. পরিবেশ-সহিষ্ণু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।
২৭. ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং এই ঘোষণার সংবিধানে সন্নিবেশ।
২৮. ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন।