দিয়াবাড়ির মাইলস্টোনে ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনার পর কিছুতেই সেই ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মাথার ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যেতে দেখলেই যেন ভয়ে আঁতকে উঠছেন শিশুরা।
দুপুরে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল কর্তৃপক্ষের ডাকে ক্যাম্পাসে সন্তানদের নিয়ে এসেছেন অনেক অভিভাবকরা। কেউ এসেছেন সন্তানের ফেলে যাওয়া ব্যাগ নিতে। আবার কেউ এসেছেন বিমান বাহিনী পরিচালিত মেডিকেল শিবিরে সন্তানের শাররিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে।
ক্যাম্পাসে আসা এসব অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেই ভয়াবহ দূর্ঘটনা এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের। চোখের সামনে নিজেদের সহপাঠীদের পোড়া দেহ আর আগুনের লেলিহান যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
মায়ের সঙ্গে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে আসা ক্ষুদে শিক্ষার্থী লামহা জাহান জান্নাত সেদিনের সেই মুহুর্তের বর্ণনা দিয়ে জানান, আমি আমার বোনকে নিতে এসেছিলাম। আমার বোন তখন ক্যান্টিনের সামনে পর্যন্ত এসেছে। আর তখনই বিমান দূর্ঘটনা হয়েছে। এতে আমার বোনের দুজন বন্ধু মারা গেছে।
ভয়ার্ত কণ্ঠে শিশু লামহা জান্নাত জানায়, আমার বোন ভয়ে ক্যান্টিনের সামনে অজ্ঞান হয়ে গেছিল। ওর মাথা দিয়ে রক্ত বের হইতেছিল। আমার বোন বাসায় গিয়ে ৫ ঘন্টা কান্না করছে আর বলছে আমার বন্ধুগুলো চলে গেছে। ওর কথা শুনে আমার এত ভয় লাগছে যে আমি এ রুম থেকে আরেক রুমে যেতে পারিনা।
বিমান বাহিনীর স্বাস্থ্য ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা মাইলস্টোনের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া জাহান অথৈই জানায়, ঘটনার দিন আমি ওই বিল্ডিংয়ের ভিতরে ছিলাম। স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় মেয়েরা নেমে যায় এবং ছেলের নামছিল। আমরা ডিসিপ্লিন ক্যাপ্টেনরা সবার পরে নামি।
তাসমিয়া জানায়, ওইদিন আমার কোচিং ছিল। সাড়ে তিনটায় ছুটি হবে। কিন্তু, আমার এক ফ্রেন্ড এসে বলল যেন একটু ওর সাথে নিচে নামি। আমি নিচে নেমে একটু হাটার পরেই বিমানটা এসে বিধ্বস্ত হয়। তখন ক্লাসের ভেতর ডিসিপ্লিন ক্যাপ্টেনরা বসে ছিল। ওরা সবাই আটকে পড়েছিল। বিষয়টা ভাবতেও ভয় লাগে।
অন্যদিকে, ভয়াবহ ওই বিমান দূর্ঘটনায় সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কমুক্ত নয় অভিভাবকরাও। ছেলেকে নিয়ে মেডিকেলে ক্যাম্পে আসা পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাফি ইসলামের মা শিউলি আক্তার জানায়, ছেলে এখনো মানসিক অসস্তির মধ্যে রয়েছে। দুর্ঘটনার সময় ওই স্কুলের ভিতর আটকা ছিল। আমার ছেলের হাতে আঘাত পেয়েছে এবং ওর কান ও নাক পুড়ে গেছে।
তিনি জানান, ওর শরীরের অনেক জায়গায় দাগ আছে এখনো। প্লেনের শব্দ শুনলেই আবার এক্সিডেন্ট হবে ও এখন এমনটা মনে মনে ভাবে।
আফরিন জাহান নামের অপর এক অভিভাবক জানান, আমার বাচ্চা ক্লাস থ্রির ইংলিশ ভার্সনে পড়ে। সেদিন ও যে বিভৎস দৃশ্য দেখছে তা ও কিছুতেই ভুলতে পারছে না।
ওই অভিভাবক জানান, ওদের এখন মেইন সমস্যাটা হচ্ছে প্লেনের আওয়াজ শুনলেই ওরা ভয় পাচ্ছে। আজ নয় দিন পর ওকে এখানে আনছি ভয়টা ভাঙ্গানোর জন্য। কিন্তু, পাঁচ-দশ মিনিট পর পর এখান দিয়ে প্লেন যাওয়ায় ভয় কাটছে না। আমার বাচ্চা বলতেছে মা আমাকে আর ওই স্কুলে দিও না। আমাকে অন্য স্কুলে পাঠাও।
মঙ্গলবার দুপুরে বিমান বাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহকারি প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দীন আসাদ। এ সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করা শেষে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো- যারা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কিংবা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে সরাসরি সেবার সুযোগটা করে দেওয়া।
তিনি বলেন, আমরা গতকাল থেকেই সারা পাচ্ছি। আর রোগীর সংখ্যা গতকাল থেকে আজ অনেক বেশি। যে কতদিন লাগে আমরা মেডিকেল ক্যাম্প চালু রাখব।
তিনি আরো জানান, আমরা আমাদের প্রশিক্ষিত কাউন্সিলরদের নিয়ে এসেছি। পাশাপাশি কলেজর যারা কাউন্সিলর আছে তাদের সাথে নিয়ে বাচ্চাদের কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। আমাদের এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে যতদিন প্রয়োজন হয়।
বক্তব্যে সরকারি ভাবে তদন্ত পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে মর্মান্তিক ওই বিমান দূর্ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি