পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসন যখন নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়ে তুলেছে, তখন জার্মান সরকার ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আবারও প্রমাণ করেছে—তারা কেবল ইরানের প্রতিপক্ষদের পাশেই দাঁড়াচ্ছে না, বরং ইউরোপে ইহুদিবাদী শক্তির অন্যতম মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডিব্রিন্ট অধিকৃত তেল আবিব সফরের সময় ইরানের প্রতিরোধকে “সন্ত্রাস” হিসেবে চিহ্নিত করে সরাসরি যুদ্ধমুখী অবস্থান নেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, “ইসরায়েলের আত্মরক্ষার পক্ষে জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে রয়েছে।” জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্টজও একই সুরে কথা বলেছেন, ইরানকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলি হামলাকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থান কেবল নৈতিক অবক্ষয়ের প্রকাশ নয়, বরং এটি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও আগ্রাসনের সহায়তাকারী শক্তি হিসেবে জার্মানির অংশগ্রহণের প্রমাণ।
এই বাস্তবতা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন মনে পড়ে, ১৯৮০-এর দশকে জার্মান কোম্পানিগুলোই সাদ্দাম হোসেনকে রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ করেছিল, যা কুর্দি জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল। আজ সেই ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হচ্ছে গাজায়—ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যায় জার্মানি রাডার, সাবমেরিন এবং বিচারিক সহায়তা দিচ্ছে।
২০১৫ সালের জেসিপিওএ চুক্তিতে যুক্ত থাকলেও জার্মানি ইরানের প্রতি কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। বরং মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত সমর্থন করে ‘ইন্সটেক্স’ নামে প্রতারণামূলক কৌশল গ্রহণ করেছিল।
সবচেয়ে হতবাক করার মতো বিষয়—ইরানের সাথে যুদ্ধবিরতির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে জার্মান সামরিক সহায়তা পৌঁছানো, যা এই যুদ্ধে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্ন উঠেছে—যে দেশ ইতিহাসজুড়ে উপনিবেশ, গণহত্যা ও আস্থাভঙ্গের প্রতীক, সেই জার্মানির আদৌ কি নৈতিকভাবে ইরানের বিষয়ে কথা বলার অধিকার আছে?