তুর্কি সমাজের প্রাচীন এই সংস্কৃতিতে প্রাণসঞ্চার করেছেন মসজিদের ইমাম সেরদার জেঙ্গিন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে মসজিদের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি মসজিদে একটি জ্ঞানকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলে তিনি ‘হাজি আজিজে এরগুন ইসলামী বিজ্ঞান গ্রন্থাগার প্রকল্প’ নামের একটি প্রস্তাব তুরস্কের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরে (Dianet) জমা দেন।
পাঠাগারে আছে তুর্কি দিয়ানেত ফাউন্ডেশন থেকে সংগৃহীত ধর্মীয় বই, শিশু, নারী ও যুবকদের উপযোগী নানা বই। গত বছর রমজান মাসে শুরু হওয়া এই পাঠাগারে এরই মধ্যে দুই হাজার বই সংগৃহীত হয়েছে। বইগুলো সাত থেকে সত্তর বছর বয়সীরা পড়তে পারবে।
পাঠাগারটি বর্তমানে শিশু-কিশোরদের পাঠের প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। এখানে তারা স্কুল সময়ের বাইরে পড়ালেখা ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে। আশপাশের এলাকার বাসিন্দারাও এখানে এসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়তে ও আড্ডা দিতে পছন্দ করে। পাঠকদের উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে চা ও কফি সরবরাহ করা হয়। ইমাম জেঙ্গিন জানান, মসজিদটি এখন অনেক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
পাঠাগারের গুরুত্ব তুলে ধরে জেঙ্গিন বলেন, এটি পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি পাঠাগারের গুরুত্ব সম্পর্কেও সচেতনতা তৈরি করছে। দানকারীদের সহায়তায় মসজিদের ভেতরে একটি বহুমুখী স্থান গড়ে তোলা হয়েছে, যা একসঙ্গে উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। এই মসজিদে শিশু, নারী ও তরুণদের জন্য আলাদা অংশ আছে। ইসলামের চারটি মাজহাব অনুসারে ধর্মীয় বিধান জানার জন্যও আছে নির্ধারিত অংশ, যা দর্শনার্থীদের ফিকহবিষয়ক জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে।
গত বছর পাঁচজন শিক্ষার্থী এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে এবং এ বছর আরো অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন এবং মাসিক পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়, যেখানে ছোট-বড় সবাই অংশ নেয়। এসব পাঠচক্র ইসলামী, নৈতিক ও সাহিত্যের জ্ঞান বিকাশে সহায়ক। এর মূল লক্ষ্য হলো ভবিষ্যতের মিমার সিনান, জেজেরি, চিকিৎসক ও পণ্ডিতদের গড়ে তোলা—যারা তুরস্কের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এলাকার বাসিন্দারাও মসজিদের এই আয়োজনে অত্যন্ত খুশি। ৭৫ বছর বয়সী নাজিম ইউলদিরিম বলেন, ‘এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য খুবই উপকারী। এখানে এসে কিছু শেখা আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান। ভুল কাজে সময় নষ্ট না করে আমরা এখানে এসে সওয়াব অর্জন করি। শিশুরা আমাদের দেখে উৎসাহিত হয়।’
নবীন প্রজন্মও উচ্ছ্বাসে ভরপুর। ১০ বছর বয়সী আইলুল সাহরা ইয়ামান বলেন, ‘স্কুলের পর এখানে আসা আমার খুব ভালো লাগে। বইগুলো দারুণ আর অনেক মজার ইভেন্ট হয়।’