২০২৪ সালের ২১ জুলাই, রোববার—কোটা সংস্কার আন্দোলনের চতুর্থ দিনেই উত্তাল বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাতিল করলেও সারাদেশজুড়ে আন্দোলন ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ১৯ জন। আহত হন শতাধিক।
সর্বোচ্চ আদালত সরকারি চাকরিতে ৭% কোটা এবং ৯৩% মেধাভিত্তিক নিয়োগের রায় দিয়ে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেয়। রায়কে স্বাগত জানালেও আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
এদিন ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও চট্টগ্রামে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। আন্দোলনে জড়িতদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। পূর্বাচলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
দেশজুড়ে কারফিউ বলবৎ ছিল, বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। পোশাক কারখানাসহ সব শিল্প-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনার মধ্যেই ছাত্ররা আট দফা দাবি তুলে ধরেন এবং ২২ জুলাই গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশে ৫৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াত সংশ্লিষ্ট বলে দাবি সরকারের। রাজধানীতে রামপুরা বিটিভি ভবনে আগুন, সেতু ভবনে ভাঙচুর, গাজীপুরে সাবেক মেয়রের বাড়িতে হামলার মতো ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। বিএনপি নেতা আমীর খসরু, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই রাতে সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন এবং সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নির্দেশনা দেন। পিএসসি থেকে জানানো হয়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
২১ জুলাইয়ের ঘটনাবলি বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসে এক রক্তাক্ত ও অস্থির দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।