সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ অপরাহ্ন

১৫ জুলাইয়ের সহিংসতা: ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা, রণক্ষেত্র ঢাবি

উত্তরা নিউজ প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই (সোমবার) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দেশব্যাপী দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভয়াবহ সহিংসতায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শিক্ষাঙ্গন। এতে অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই আহত হন ২৯৭ জন।

ছাত্রলীগের এই সংগঠিত হামলা আসে ১৪ জুলাই বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর, যেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটুক্তি করেন। এর প্রতিবাদে সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস—ছাত্রী হলগুলো থেকে শুরু হয়ে শত শত শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে।

পরদিন সকালে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের ও ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের উসকানিমূলক বক্তব্যের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় সমন্বিত হামলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বর, শহীদুল্লাহ হল, মধুর ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, হকিস্টিক, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও রেহাই দেয়নি হামলাকারীরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। হামলায় নারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ অনেকে গুরুতর আহত হন।

একই দিন দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খুলনা, কুমিল্লা, যশোর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্রলীগের হামলায় শিক্ষার্থীরা আহত হন।

ছাত্রলীগের এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এ হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত, পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকেছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল সহিংসতার পর রাতে প্রাধ্যক্ষদের হলে থাকার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ।

১৬ জুলাই দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং দুঃখপ্রকাশের দাবি জানানো হয়।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম আতঙ্ক, উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষও এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102