সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

চলে গেলেন রুপালি পর্দার রাজকন্যা বি সরোজা দেবী

বিনোদন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী বি সরোজা দেবী আর নেই। সোমবার (১৪ জুলাই) বেঙ্গালুরুতে নিজের বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। এনডিটিভি এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন এই বরেণ্য অভিনেত্রী।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অভিনয়জগতে পা রাখেন বি সরোজা দেবী। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া কন্নড় ভাষার ছবি ‘মহাকবি কালিদাস’ দিয়েই শুরু হয় তাঁর চলচ্চিত্রজীবন। তবে ১৯৫৮ সালে তামিল সিনেমা ‘নাডোডি মান্নান’-এ এম জি রামচন্দ্রনের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে রাতারাতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। ওই সিনেমার সাফল্যের পর দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ রাজত্ব।

চার দশকের বেশি সময়জুড়ে বি সরোজা দেবী অভিনয় করেছেন দুই শতাধিক সিনেমায়। কন্নড়, তামিল, তেলেগু এবং হিন্দি ভাষায় সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাঁর সহশিল্পীদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণের কিংবদন্তি অভিনেতা শিবাজি গণেশন, জেমিনি গণেশন, রাজকুমার এবং এনটি রামা রাও।

১৯৫৫ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৬১টি সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করে তিনি গড়েছেন ভারতীয় সিনেমার এক অনন্য রেকর্ড, যা এখনও কেউ ভাঙতে পারেননি। বিশেষ করে এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল রুপালি পর্দার অন্যতম জনপ্রিয়। এই জুটির একসঙ্গে ২৬টি হিট সিনেমা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘থাই সোল্লাই থাথাধে’, ‘থায়াই কাথা থানায়ান’ এবং ‘নীদি পিন পাসাম’। শিবাজি গণেশনের সঙ্গে করেছেন ২২টি টানা সফল সিনেমা।

তেলেগু সিনেমায় এনটি রামা রাওয়ের বিপরীতে ‘সীতারাম কল্যাণম’, ‘জগদেকা ভীরুনি কথা’ এবং ‘দাগুদু মুথালু’ ছিল সুপারহিট। হিন্দি সিনেমায়ও তিনি রেখেছেন নিজের শক্তিশালী উপস্থিতির ছাপ। ‘পয়গাম’, ‘অপেরা হাউস’, ‘সসুরাল’ এবং ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া’-এর মতো সিনেমায় তাঁর অভিনয় আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে।

অভিনয়জীবনে তিনি পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। ১৯৬৯ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী এবং ১৯৯২ সালে পদ্মভূষণ-এ ভূষিত হন। তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন ‘কালাই মামানি’ সম্মাননা। বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।

অভিনয়ের বাইরেও বি সরোজা দেবী ছিলেন চলচ্চিত্র সংগঠনের নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। কন্নড় চলচ্চিত্র সংঘের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ৫৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের প্রধান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

১৯৩৮ সালের ৭ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন সরোজা দেবী। পিতা ভাইরাপ্পা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা রুদ্রম্মা গৃহিণী। তিনি তাঁদের চতুর্থ সন্তান। ১৯৮৬ সালে স্বামী শ্রী হর্ষের মৃত্যুর পরও তিনি চলচ্চিত্রজগৎ থেকে সরে যাননি। বরং তরুণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, নতুন উদ্যোগে যুক্ত থাকা—সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন সৃষ্টিশীল নানা কর্মকাণ্ডে।

দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর মৃত্যুতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অভিনেত্রী খুশবু সুন্দর এক্স-এ শোক জানিয়ে লিখেছেন, “সিনেমার স্বর্ণালী যুগ অবসানের পথে। সরোজা দেবী আম্মা সবসময়ই সেরা ছিলেন। দক্ষিণের আর কোনো অভিনেত্রী তাঁর মতো নাম, খ্যাতি পাননি। কী মায়া ভরা ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁর সঙ্গে আর দেখা না হলে আমার বেঙ্গালুরু সফর অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102