প্রতিদিনের জীবনের এক অনিবার্য বাস্তবতা হলো মৃত্যু। আজও আমরা শুনছি—কেউ না কেউ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরস্থায়ী জগতের পথে পাড়ি জমিয়েছেন। জন্মের পর মৃত্যুর দিকে আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই এগিয়ে চলেছে। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা—“কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মাউত”—প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
এই মৃত্যু কেবল একটি দেহের পতন নয়, বরং এক চিরন্তন জীবনের সূচনা। পৃথিবীর বন্ধন ছিন্ন করে মানুষ প্রবেশ করে এমন এক জগতে, যেখানে শুরু হয় পরকালীন জবাবদিহির কঠিন সফর। অনেকেই ভুলভাবে ভাবেন—মৃত্যু মানেই মুক্তি, দুনিয়ার কষ্টের অবসান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মৃত্যুই সেই দরজা যার ওপারে অপেক্ষা করে আমাদের কর্মের হিসাব, পুরস্কার কিংবা শাস্তি।
দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষ যা করে—তার প্রতিফলন সে দেখতে পায় কবর থেকে শুরু করে কিয়ামতের ময়দানে। যে ব্যক্তি জীবনে সৎকর্ম করেছে, আল্লাহর পথে চলেছে, মানুষের হক আদায় করেছে—তার জন্য অপেক্ষা করে জান্নাতের শান্তি। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি অন্যায়, পাপ, ঋণ ও মানুষের অধিকার হরণ করে মৃত্যুবরণ করেছে, তার জন্য রয়েছে ভয়াবহ জবাবদিহি ও শাস্তির আশঙ্কা।
বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, ঋণ ও হক আদায় করা শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়—বরং ঈমানি দায়িত্ব। ঋণ রেখে মৃত্যু হলে, পরকালে মুক্তি পাওয়া কঠিন। তাই প্রত্যেক মুমিনকে উচিত, জীবদ্দশায় নিজের দেনা-পাওনার হিসাব পরিষ্কার করে যাওয়া।
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী—
✔ অন্যের হক যথাযথভাবে আদায় করা,
✔ মানুষকে সৎ পথে ডাকা,
✔ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়া,
✔ গুনাহ থেকে দূরে থাকা ও তাওবায় ফিরে আসা,
✔ একিন ও এখলাস সহকারে ইবাদত করা,
✔ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর নির্দেশ পালনে সচেষ্ট থাকা—এই গুণগুলোই একজন মুমিনের জন্য পরকালীন সফলতার চাবিকাঠি।
আজকের এই স্মরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মৃত্যু কারও জন্য সময় নেয় না, পূর্বনির্ধারিত মুহূর্তেই তা এসে পড়ে। কেউ জানে না, আগামীকাল সে থাকবে কিনা। তাই এখনই নিজেকে সংশোধনের সময়, তওবায় ফিরে আসার সময়, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার সময়।
দোয়া করি—হে আল্লাহ! আপনি আমাদের দুনিয়ার ধোঁকা, শয়তানের ধোঁকা ও নফসের প্রবঞ্চনা থেকে হেফাজত করুন। আমাদের এমন জীবন দান করুন যাতে মৃত্যুর পরে আপনার সন্তুষ্টির সাথে আমরা জান্নাতের দরজায় পৌঁছাতে পারি। আমিন।