রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

জুলাইয়ে উত্তরা অপারেশনের গল্প শোনালেন লাবিব

উত্তরা নিউজ প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম: শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

উত্তরার জুলাই অভিযান: লাবিব মুহান্নাদের গল্প
অনুলিখন: ইবরাহীম খলিল

২ জুলাই, উত্তরা। সন্ধ্যার আলো ফুরোচ্ছে। এক চায়ের দোকানে বসে কথা হচ্ছিল আন্দোলনের দিনগুলো নিয়ে। হঠাৎ লাবিব মুহান্নাদ বলে উঠলেন, “জুলাইয়ের সেই দিনগুলো না ভুলতে পারা স্মৃতি হয়ে গেছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু। ১৫ জুলাই ঢাবিতে ছাত্রলীগের নির্মম হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন লাবিব। প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন—উত্তরার স্কুল-কলেজের ছাত্রদের সাথেই তো বেশি মেলামেশা, ঢাবির মাঠে নামা উচিত হবে কি না। তবে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগকে দেখে আর পেছাতে পারেননি।
“ছয় হাজার মানুষের লেয়ার ভেঙে আমরা পেছনে ছিলাম, আমি যখন পেছন ফিরে দেখি দেখি মেয়েদের লেয়ার… তখনই বুঝলাম আজকে মাইর খাওয়া নিশ্চিত।”

ছত্রভঙ্গ, পালিয়ে বেড়ানো, লাল বাসের নিচে লুকিয়ে থাকা, শেষ মুহূর্তের আশ্রয়, তারপর এক সিএনজিতে করে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ানো—সবই যেন সিনেমার দৃশ্য।
“ছাত্রলীগের চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝছিলাম, এরা কাউকে ছাড়বে না। আমি দৌড়ে গিয়ে লাল বাসের নিচে অন্ধকারে লুকিয়ে পড়লাম।”

সেদিনকার প্রতিজ্ঞা ছিল—এই আন্দোলন আর পিছু হটবে না। উত্তরা যেন তখন মিনি যুদ্ধক্ষেত্র। বাঁকানো রড, কাঁচের বোতল, পেট্রোল, আর সাহস।
“ছেলেগুলো এমন ছিল যেন কারো জীবনে কিছু হারানোর নেই। কেউ প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছে, কেউ সংসারে বোঝা—সবার মুখে একই কথা, মরলে আফসোস নাই।”

১৬ জুলাই টঙ্গিতে অবস্থান, ১৮ তারিখে সাউন্ড গ্রেনেডের সাথে সাথে উত্তরা কেঁপে ওঠে। লাশ পড়ে রাস্তায়, মসজিদে ঘোষণা হয়, “আমাদের ভাইদের হত্যা করা হয়েছে।”
লাবিব বলেন, “কয়েকটা লাশ দেখেছিলাম বাথরুমে পড়ে ছিল। আমি দাঁড়িয়ে তাদের জানাজা পড়াই। তখন মনে হচ্ছিল—এই রক্ত বৃথা যাবে না।”

পরের দিনগুলো ছিল গেরিলা কৌশলের। মাইক দখল, মসজিদে মাইকিং, ঘরে ঘরে বার্তা। “মাঠে ৩৮টা লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। ভাবছিলাম, এগুলো না লুকিয়ে ফেলা হয়।”

২০ তারিখ উত্তরা নীরব। কয়েকজন ছাড়া রাস্তায় কেউ নেই। লাবিব গাজীপুর পালিয়ে যান। পরে আবার ফিরে আসেন।
“আমার নামে মামলা হয়। তাও আবার ফিরে আসি। তখন মনে হয়, রাস্তাটা তো আমাদেরই।”

২ আগস্ট নতুন পরিকল্পনা। তিন শতাধিক ছেলেকে লাঠি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ৪ আগস্ট উত্তরা আবার আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে।
“৫ তারিখে বলি, আজকে যদি মরিই যাই, তাহলে যেন মাথায় গুলি খাই। যেন কষ্ট কম হয়।”

আল্লাহর কাছে বদরের দিনের মতো তিনশত ছেলের জয়ের দোয়া করে তারা রাজউকের সামনে দাঁড়ায়। আর তখনই শুরু হয় ঢল—শত শত মানুষ নামতে থাকে রাস্তায়।
“আমরা শুধু শুরু করেছিলাম। বাকিটা মানুষ নিজেরাই শেষ করেছে।”

লাবিবের চোখে সেই দিনগুলো এখনো টাটকা। প্রতিটি পলক, প্রতিটি আঘাত, প্রতিটি দৌড়—সব যেন এক অদম্য সাহসের ইতিহাস।


শেষ কথা:
এটা শুধু উত্তরের একজন সাহসী তরুণের গল্প না, এটা এক প্রজন্মের জেগে ওঠার গল্প।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102