এতে বোঝা যায়, নামাজ যদিও বালেগ হওয়ার পর ফরজ হবে; কিন্তু নামাজের শিক্ষাদান করতে হবে সাত বছর বয়স থেকেই। কাজেই সাত বছর বয়সই যথারীতি শিক্ষাদানের উপযুক্ত সময়।
এতে বোঝা যায়, নামাজ যদিও বালেগ হওয়ার পর ফরজ হবে; কিন্তু নামাজের শিক্ষাদান করতে হবে সাত বছর বয়স থেকেই। কাজেই সাত বছর বয়সই যথারীতি শিক্ষাদানের উপযুক্ত সময়।
পরিণত বয়সে দ্বিন শেখার কিছু ইতিবাচক দিক
শিশু-কিশোররা সাধারণত অভিভাবকদের চাপে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে।
আবু বকর (রা.)-এর দ্বিনি জ্ঞান অর্জন শুরু হয় প্রায় ৪০ বছর বয়সে। উমর (রা.) ৩০ বছর বয়সে ইলমের ময়দানে পা রাখেন। ইমাম বুখারি (রহ.) এ বিষয়ে ‘ইলম’ অধ্যায়ে উমর (রা.)-এর একটি বক্তব্য উল্লেখ করেছেন—পরিচ্ছেদ : ইলম ও হিকমতের ক্ষেত্রে সমতুল্য হওয়ার আগ্রহ প্রসঙ্গে। আর উমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা বয়স বেশি হওয়ার আগেই ইলম শিখে নাও।’
এ কথার ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ‘অর্থাৎ বয়স বেশি হওয়ার পরও ইলম শিক্ষা করো। কারণ সাহাবায়ে কিরাম (বেশির ভাগ) তো বয়স অধিক হওয়ার পরই দ্বিনি ইলম শিক্ষা করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, পৃষ্ঠা-৩৯)
বেশি বয়সে দ্বিনি জ্ঞান অর্জনের আরো কয়েকটি নজির দেখা যাক—আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.), বয়স হওয়ার পর যাঁরা ইলম শেখা শুরু করেছেন তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধতম ব্যক্তি।
তাঁর ইলমে ফিকহ অন্বেষণের সূচনা হয়েছিল বিশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে। ইবনে হাজম নিজেই সে ঘটনা বলেছেন। একদিন তিনি এক জানাজায় শরিক হন। তখন একটি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়েন। এক ব্যক্তি তখন তাঁকে বলল, ‘ওঠ, আগে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামাজ পড়ো।’ তখন তাঁর বয়স ছিল ২৬। তিনি তখন নামাজে দাঁড়িয়ে যান। জানাজা শেষে ফিরে আসার সময়ও মসজিদে যান। এবার প্রবেশ করা মাত্রই নামাজ শুরু করে দেন। তখন তাঁকে বলা হলো, ‘আরে বসো বসো; এখন নফল নামাজ পড়ার সময় নয়।’ তখন ছিল আসরের পর। ঘটনাটি তাঁর মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। এর পর থেকেই তিনি ইলম অর্জন শুরু করেন। তাঁর এ অজ্ঞতাই ইলম অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
[মুজামুল উদাবা, ইবনে হাজম (রহ.)-এর জীবনী]
বয়স হওয়ার পর যাঁরা ইলম শেখা শুরু করেছেন তাঁদের মধ্যে আরো একজন ব্যক্তি হলেন আবু বকর আল-কাফফাল (রহ.)। তিনি শাফেঈ মাজহাবের অন্যতম ইমাম ছিলেন। তাঁর বয়সের কোঠা ৩০ পেরিয়ে যাওয়ার পর ইলম অন্বেষণের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এক পর্যায়ে ফিকাহ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
(তাবাকাতুশ শাফিইয়্যা : ৫/৫৪)
বয়স হওয়ার পর যাঁরা ইলম শেখা শুরু করেছেন তাঁদের মধ্যে আরো একজন ব্যক্তি হলেন আবু আবদুল্লাহ আসবাগ ইবনুল ফারজ (রহ.)। তিনি মালেকি মাজহাবের বরেণ্য ফকিহ। আল্লামা জাহাবি (রহ.) তাঁর ব্যাপারে বলেন, তিনি প্রৌঢ় বয়সে ইলম অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন।
(সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১০/৬৫৬)
তবে হ্যাঁ, বয়স হয়ে যাওয়ার পর দ্বিন শেখার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। সংসার, উপার্জনের ভয় ছাড়াও বয়স একটু বেশি হয়ে গেলে কিছু আর মনে থাকতে চায় না। কোনো কিছু মুখস্থ করতে হলে অনেক সময় লাগে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। তবে এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলছি, মানুষ যখন কোনো কাজের হিম্মত করে তার জন্য শতভাগ চেষ্টা ব্যয় করে, তখন সে কাজ মহান আল্লাহ তার জন্য সহজ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’