বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনও উত্তপ্ত। ২০২৪ সালের আগস্টে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। দুর্নীতিতে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, অগ্রযাত্রা বাধাহীন নয়।
সাম্প্রতিক সহিংসতা, রাজনৈতিক বিভাজন, ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ঘিরে বিতর্ক সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ১১ মাসে অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত মিললেও—যেমন রিজার্ভ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির হার হ্রাস, এবং আন্তর্জাতিক ঋণ অনুমোদন—রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক কূটনীতিতে টানাপোড়েন বড় উদ্বেগের জায়গা হয়ে উঠেছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির বিপরীতে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যেমন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি অভ্যন্তরীণভাবে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান—যেমন ছাত্রনেতৃত্বাধীন এনসিপি—আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে এনসিপির জনপ্রিয়তা এখনও সীমিত, আর বড় দুই দল বিএনপি ও জামায়াত এখনো মূল ভোটব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে।
ড. ইউনূস ২০২৬ সালের নির্বাচনের রূপরেখা দিতে চাইলেও, ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া এখনও অনিশ্চিত। এরই মধ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি—নতুন জরিপে ১৪% ভোটার এখনো দলটিকে সমর্থন করছেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, রাজনীতিকদের হেফাজতে মৃত্যু, এবং ভোটাধিকার সীমিত করার আশঙ্কা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আইনবিদ আখতার খানের মতে, “বাংলাদেশের এখন প্রয়োজন একটি ম্যান্ডেলা-মুহূর্ত—একতার, নয় বিচ্ছিন্নতার।”
এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন থেকেই যায়: ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের এই রাষ্ট্র কি গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে এগিয়ে যেতে পারবে, নাকি আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করবে?