পিলখানা ট্র্যাজেডির তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল। আজ বুধবার (২৫শে জুন,২০২৫) রাজধানীর সাইন্সল্যাবে কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত তৃতীয় সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিশনের সভাপতি ও বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।
কমিশনের অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে আসে—বিদ্রোহ প্রতিরোধে সময়মতো সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হত্যাকাণ্ডটি রোধ করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চরম ব্যর্থতা, সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কালক্ষেপণ ও বিভ্রান্তিকর গণমাধ্যম কাভারেজ বিদ্রোহকে আরো উসকে দেয়।
এখন পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে; আরও ৫০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি।
শহীদ পরিবারের সদস্য, বেঁচে ফেরা অফিসার, রাজনীতিবিদ, সামরিক-অসামরিক ও বেসরকারি ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল পক্ষের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
২৫ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ও ২৯ জন কারামুক্ত বিডিআর সদস্যের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।
ভিডিও, সিসিটিভি, বইপত্র, জাতীয় সংসদের কার্যবিবরণী, সংবাদ প্রতিবেদন ও ১০৩৮টি ইমেইলসহ বিপুল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণাধীন।
সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ববর্তী তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সম্পন্ন।
বিজিবি, ডিজিএফআই ও র্যাব সদরদপ্তর পরিদর্শনসহ ২৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ও বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অবহেলা ও ব্যর্থতা ছিল প্রকট।
কিছু গণমাধ্যম বিদ্রোহকে উসকে দেয় ও সামরিক অফিসারদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
বিদেশি সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে, যাচাই-বাছাই চলছে।
তদন্তের স্বার্থে ৩৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা।
পলাতকদের খুঁজে পেতে ৩টি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি।
তথ্য সংগ্রহে ৬টি বিদেশি দূতাবাস ও জাতিসংঘের অফিসের সাথে যোগাযোগ।
তদন্ত প্রতিবেদন খসড়া প্রস্তুত; কিছু সাক্ষ্য ও তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন।
বাকি সাক্ষ্যগ্রহণ, পুনঃসাক্ষ্য, বিদেশি তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণমূলক কাজের জন্য কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়েছে।
কমিশনের মন্তব্য অনুযায়ী, সময়মতো সামরিক হস্তক্ষেপ ও গোয়েন্দা তৎপরতা থাকলে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করা সম্ভব হতো। তদন্ত এখনও চলমান এবং কমিশন শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে