উল্লিখিত নারীদের সঙ্গে পুরুষদের এমন একটি সম্পর্ক আছে যে তারা পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। তবে এদের সঙ্গেও তথাকথিত ‘রোমান্স’ করা হারাম।
নারীদের সঙ্গে তথাকথিত রোমান্সের সম্পর্ক করার দুটি পথ আছে, এক হলো বিয়ে করা স্ত্রী। আরেকটি হলো দাসী। দাসীর প্রথা যেহেতু এখন নেই, তাই বিয়ে প্রথাই এখন নারীদের সঙ্গে রোমান্সের সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র হালাল মাধ্যম এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র বৈধ সম্পর্ক কাঠামো। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হলো এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গিণী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পার আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে।’
(সুরা : রুম, আয়াত : ২১)
ব্যভিচারে পথকে সুগম করে : সিচুয়েশনশিপ নামক অসুস্থ এই সম্পর্ক দৈহিক সম্পর্কে রূপ নেওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। যেহেতু সম্পর্কটার চরিত্রই রোমান্টিক, তাই বলা যায়, ‘আপাত’ শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটি অসুস্থ সম্পর্ক কাঠামো এটি, যাকে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)
এই সম্পর্ক যদি কারো ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্ত না-ও পৌঁছে, তবু সেখানে ব্যভিচারের গুনাহ থাকে। কেননা অবৈধ উপায়ে রোমান্সের প্রতিটি ধাপই মূলত ব্যভিচার। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা)।
(বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের জিনা (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের জিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের জিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের জিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের জিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)
সিচুয়েশনশিপে এর সব গুনাহই প্রতিনিয়ত ঘটে।
ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে : এই অবৈধ সম্পর্কের মোহ মানুষের ঈমানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কেননা ব্যভিচার এমন একটি মারাত্মক পাপ, যা মানুষের হিতাহিত জ্ঞান যেমন কেড়ে নেয়, তেমনি ঈমানকে কলুষিত করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মুমিন থাকে না…। (মুসলিম, হাদিস : ১০৬)
পরিবারব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে : ইসলাম নারী-পুরুষের চরিত্র ও বংশের পবিত্রতা রক্ষায় বিয়ে সহজ করার প্রতি তাগিদ দেয়। যেমন—পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’
(সুরা : নুর, আয়াত : ৩২)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)
কিন্তু আজকাল বিয়ে কঠিন হয়ে গেছে। শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় রূপে ব্যভিচার সহজ হয়ে গেছে, যা সমাজকে দিন দিন চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মহান আল্লাহ আমাদের সমাজকে এসব অসুস্থ সম্পর্ক থেকে রক্ষা করুন। আমিন।