শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ১০:০২ অপরাহ্ন

ভয় ও শঙ্কার সময়ে মুমিনের মনোবৃত্তি

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
আধুনিক জীবনে মানুষের মনমানসিকতায় এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করে। মানুষ উপার্জন বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আর প্রাচুর্যের মধ্যে অপচয় হয়ে উঠেছে অনিবার্য অভ্যাস। ফলে সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়, উদ্বেগ আর হতাশার বিষাক্ত ছায়া। পার্থিব সুখ-সুবিধার প্রতি অতি আকর্ষণ মানুষকে ক্রমেই আরো উদ্বিগ্ন করে তুলছে, বিশেষ করে যুদ্ধবিগ্রহ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির এই সময়ে।কিন্তু একজন মুমিন বরাবরই এর বিপরীত। সে তার অন্তরকে দৃঢ়-স্থির রাখে, ভয় ও উদ্বেগহীন এবং শান্তি-প্রশান্তিতে জীবনযাপন করে।পার্থিব অজানা শঙ্কায় একজন মুমিনের জন্য ইসলামী জীবনদর্শন একাধিক পথ ও পন্থা নির্দেশ করে। এর অন্যতম একটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সদা জাগ্রত রাখা, বিশেষত আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও ঈমানদারদের সঙ্গ লাভ করা এবং তাঁদের মতো চিন্তা-চেতনা লালন করা।কারণ যে ব্যক্তি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তার সঙ্গে আছেন, সে কখনো ভেঙে পড়ে না, হতাশও হয় না; বরং তার অন্তর থেকে ভয় ও দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সরে যায়, ফলে হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন, যারা তাঁকে ভয় করে এবং সৎকর্ম করে।’(সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৮)

একজন মুমিন যখন অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে যে তার রিজিকদাতা আল্লাহই; সুস্থতা ও সান্ত্বনার মালিকও তিনিই, তখন তার হৃদয় থেকে অস্থিরতা ধীরে ধীরে সরে যায়। তবে সে যেন অধৈর্য না হয়, কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও রিজিক যত দেরিতেই আসুক না কেন, তা অবশ্যম্ভাবী এবং যথাসময়েই আসে।রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ ঘোষণা করেন—‘আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)হাজেরা (আ.)-এর ঘটনা মুমিনের জন্য অমর উদাহরণ। যখন ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে হাজেরা (আ.) ও তাঁর শিশুপুত্র ইসমাঈলকে মক্কার নির্জন উপত্যকায় রেখে গেলেন—যেখানে না ছিল পানি, না ছিল খাদ্য, না ছিল কোনো সহচর, তখন তিনি চুপচাপ সিরিয়ার দিক ফিরে হাঁটতে শুরু করলেন। হাজেরা (আ.) বিস্মিত হয়ে তাঁর পেছন পেছন গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘আল্লাহ কি আপনাকে এটি করতে বলেছেন?’তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন হাজেরা দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে বলেন, ‘তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আমাদের অবহেলা করবেন না।(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৫)

এই নির্ভরতা, এই অকুণ্ঠ বিশ্বাসই ছিল তাঁর প্রকৃত শক্তি। যার ফলাফল আজও জগদ্বাসী অবাক বিস্ময়ে স্মরণ করে। আল্লাহ তার জন্য উপহার দিলেন জমজমের পবিত্র ঝরনা, যা আজও অনবরত প্রবহমান।

পার্থিব অস্থিরতা ও শঙ্কা দূর করার অন্যতম উপায় হলো প্রতিটি বিষয়েই একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া, তাঁর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখা। একজন প্রকৃত মুমিন আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে বারবার এই ঘোষণা দেন—‘আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই সাহায্য চাই।’

(সুরা : ফাতিহা, আয়াত : ৫)

পার্থিব ভয় ও অস্থিরতা থেকে মুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো আল্লাহ তাআলার অসীম দয়া ও উদারতা স্মরণ করা। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি সীমাহীন অনুগ্রহশীল। তিনি বান্দাদের ভুলত্রুটির উপযুক্ত শাস্তি দেন না—যদি দিতেন, তবে এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর চেয়ে কেউ বেশি ধৈর্যশীল নন, মানুষের পক্ষ থেকে তাঁকে অনেক কষ্ট দেওয়া হয়…, তবু তিনি তাদের সুস্থ রাখেন, রিজিক দেন।’

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৯৯)

পার্থিব ভয় ও অস্থিরতা থেকে মুক্তির নিরাপদ আশ্রয় হলো নামাজ। নামাজ মানেই আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধ। নবীজি (সা.)যখনই কোনো কষ্ট, দুশ্চিন্তা বা বিপদের মুখোমুখি হতেন, তখনই তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৪৫)

পার্থিব ভয় ও অস্থিরতা দূর করার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে মহান আল্লাহ কখনোই মুমিনকে তার কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে একা ফেলে দেন না। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমি আমার রাসুলরা এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের রক্ষা করি। এভাবেই মুমিনদের রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৩)

পার্থিব ভয় ও অস্থিরতা থেকে মুক্তির শক্তিশালী চেতনা হলো এই বিশ্বাস স্থাপন করা যে পৃথিবীর কোনো কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়া আমাদের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102