সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ বন্ধ করার ভারতীয় হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি।
তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত যদি একতরফাভাবে পাকিস্তানের পানি অধিকার হরণ করে, তবে পাকিস্তানের সামনে ‘যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না’। এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ইঙ্গিত দিয়েছে এবং কাশ্মীর হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
গতকাল রোববার (১৫ জুন) জিও নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিও নিউজের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেছেন, “পানি আমাদের জীবনের স্রোতধারা। এটি আমাদের ন্যায্য অধিকার, আমাদের অংশ। ভারত যদি একতরফাভাবে পানি বন্ধ করে দেয়, তবে তা আমাদের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা আমাদের এই অধিকার কোনোভাবেই ছেড়ে দেব না।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “যদি ভারত পানি নিয়ে আগ্রাসনে নামে, তবে পাকিস্তানের সামনে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।”
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় এক প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘটনার জেরে ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে, শিখ তীর্থযাত্রী ছাড়া সকল ভারতীয়র ভিসা বাতিল করে এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান অবশ্য ওই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানায়।
বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি তার সাক্ষাৎকারে আরও দাবি করেন যে, ভারতের পানি বন্ধের হুমকি জাতিসংঘ সনদের সরাসরি লঙ্ঘন। এই বিষয়ে তিনি সম্প্রতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ব্রাসেলস) রাজধানীগুলোতে কূটনৈতিক সফর করেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ‘প্রোপাগান্ডা’র জবাব দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ অবস্থান তুলে ধরা।
যদিও তিনি যুদ্ধের পক্ষে নন বলে পরিষ্কার করে বলেন, “আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ নয়। কিন্তু দেশের অস্তিত্ব, পানির নিরাপত্তা এবং নাগরিকদের জীবন নিয়ে আমরা কোনো ছাড় দিতে পারি না।” তিনি একইসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগও তোলেন এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
বিলাওয়ালের এই কঠোর অবস্থান পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা নীতির একটি দৃঢ় প্রতিফলন। সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে এই ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, উভয় পক্ষকে সংযম এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথে ফিরিয়ে আনা।