গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছে এক বাকপ্রতিবন্ধী কিশোর। গত ৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া মো. নাসির উদ্দিন (১৭) এখনও ফিরে আসেনি। সাতদিন পেরিয়ে গেলেও তার খোঁজ না পেয়ে শোকে পাথর তার পরিবার।
নাসির কথা বলতে না পারলেও ঠিকই বুঝতে পারত। নিরীহ, শান্ত স্বভাবের ছেলেটি সেদিন নদী পার হয়ে কোর্টবাড়ি এলাকায় এক বাউল গানের আসরে গিয়েছিল বলে জানায় তার পরিবার। তারপর থেকে নিখোঁজ।
১১ জুন, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর তিনদিন খোঁজ করে হতাশ হয়ে পড়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বাবা মো. হানিফ।
মাকে ‘মা’ বলে ডাকতে ডাকতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে নাসিরকে আতঙ্কিতভাবে দৌঁড়াতে। পেছনে ছিল কয়েক যুবক, এক যুবকের হাতে ধরা ছিল ইট। এই দৃশ্য পরিবারের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। পরদিন সকালেই রেললাইনের পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় নাসিরের একটি জুতা।
নাসিরের মা শাহিদা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“জীবিত না হোক, মৃত হলেও আমি আমার ছেলেটার মুখ দেখতে চাই। এমন অমানবিক কিছু কেউ করলে তার বিচার হোক।”
এদিকে নাসিরের বাবা বলেন, “আমার ছেলেটি প্রতিবন্ধী ছিল। কথা বলতে পারত না, তবে শুনতে পারত। ‘মা’, ‘আল্লাহ’ ছাড়া কিছু বলতে পারত না। গান শুনতে খুব ভালোবাসত, তাই গান হলে চলে যেত এবং শেষ হলে বাসায় ফিরে আসত। কিন্তু সেদিন আর ফিরে আসেনি আমার নাসির।
স্থানীয়রা জানান, নাসির কারো সঙ্গে ঝামেলায় জড়াত না, কারো ক্ষতি করত না। তার এমন পরিণতির পেছনে কী আছে, জানতে চান এলাকাবাসী।
নিখোঁজের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি নাসির। ঘটনার পরও প্রশাসনের তৎপরতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এলাকাবাসী ও স্বজনরা এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নাসির এখন শুধু একটি নাম নয়—একটি পরিবার, একটি মায়ের কান্না, একটি সমাজের প্রশ্ন। নিখোঁজের অন্ধকারে সে কোথায় হারিয়ে গেল? তার মা আজও পথ চেয়ে আছেন—শুধু একবার ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরার আশায়।