ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে শিক্ষা দিতে চান, তখন তাঁর সৃষ্টি জগতকে মাধ্যম বানান— মেঘ, বাতাস, আগুন, পানি, সূর্য সবই আল্লাহর সেনাবাহিনী।’ (মাদারিজুস সালিকীন)
এই কথার তাৎপর্য হলো, পৃথিবীর সব ঘটনা শুধু পদার্থবিদ্যার নিয়মে চলে না। কিছু কিছু হয় আত্মিক-নৈতিক নিয়মে। তাই গুনাহ বেড়ে গেলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়, আকাশ থেকে রহমতের বদলে আসে কঠোরতা।
বিজ্ঞান যা বলছে : দায় কি মানবজাতিরই?
আধুনিক বিজ্ঞান গবেষকরা প্রায় একবাক্যে স্বীকার করেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা মূলত মানুষের কর্মফল। IPCC-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত ১০০ বছরে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর প্রধান কারণ শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, বন উজাড় করা, জীবাশ্ম জ্বালানির অপব্যবহার ও প্লাস্টিকদূষণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, প্রতিবছর তাপপ্রবাহে পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষত বাংলাদেশ ও ভারতে, এ মৃত্যু ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
সমাধান তাওবা ও পরিবর্তনে :
তাপপ্রবাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা ছোট, সীমিত এবং পরস্পর নির্ভরশীল। আমাদের কর্ম শুধু পৃথিবীতে নয়, আসমানেও প্রতিফলিত হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন প্রকাশ্যে গুনাহ করতে শুরু করবে, তখন এমন দুর্যোগ তোমাদের ওপর আসবে যা শুধু গুনাহকারীদের ওপর সীমিত থাকবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৮)
তাই আমাদের করণীয় হচ্ছে—নিজ নিজ গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করা, সমাজে নৈতিকতা ও পরিশুদ্ধতা ফিরিয়ে আনা, পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় হওয়া, দোয়া ও ইস্তিগফারের পরিমাণ বাড়ানো।
মনে রাখতে হবে, আকাশের নিচে এই জ্বলন্ত পৃথিবী আমাদের কাছে এক সতর্কবার্তা। যেখানে বলা হচ্ছে, হে মানুষ! থামো, ভাবো, ফিরে আসো। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয় না, কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নির্দেশে সে শিক্ষা দেয়। তাপপ্রবাহ তাই কেবল সূর্যের রোষ নয়, বরং এক আত্মিক দাগ, এক অন্তর্দৃষ্টির আহবান।
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা, এই উত্তাপ যেন আমাদের অন্তরকে গলিয়ে দেয়, আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার পথ অবলম্বন করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। আমিন।