শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:

যমুনার ভাঙনে বিপন্ন চারটি গ্রাম, নিঃস্ব শত শত পরিবার

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫

ভোরে ঘুম ভাঙে যমুনার গর্জনে। উঠে দেখি, ঘরের কোণায় নদী বইছে। চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকি। ওরা ঘর খুলে সরিয়ে নেয় আর আমি দেখি— আমার ভিটেটা চোখের সামনে যমুনায় মিলিয়ে যাচ্ছে, ঠিক এভাবেই নদীভাঙনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেন কাশারীডোবা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বিধবা বানেছা বেওয়া।

শুধু তিনি নন, নদী তীরে বসবাস করা প্রতিটি পরিবার দিন কাটাচ্ছে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায়।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নে যমুনার দুটি শাখা নদীর প্রবল ভাঙনে চারটি গ্রাম একে একে হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। এ যেন কেবল ভূমি ক্ষয় নয়, হারিয়ে যাচ্ছে শত শত মানুষের বসতভিটা, জীবনের স্মৃতি আর ফসলের মাঠ।

সাপধরীর কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া, মন্ডলপাড়া ও বিশরশি- এ চার গ্রাম যমুনার শাখা নদী দুটির হিংস্র গ্রাসে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের নদীভাঙনে ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি, মসজিদ, স্কুল, বাজার আর কয়েক হাজার একর ফসলি জমি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আজিজুর রহমান জানান, আর মাত্র কিছুদিন অব্যাহত থাকলে বিশরশি ও মন্ডলপাড়া পুরোপুরি মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, সাপধরীর কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া, মন্ডলপাড়া ও বিশরশি গ্রামে পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুইটি বাজার, চারটি বিদ্যালয়, পাঁচটি মসজিদ এবং কয়েকশ একর ফসলি জমি বর্তমানে সরাসরি নদীভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।

কিছু পদক্ষেপ, অনেক অপেক্ষা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসচিব মুবাশ্বির উল ইসলাম কাশারীডোবা এলাকায় নদীভাঙন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি দ্রুত জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি, ৫০০ মিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বালি ভরতি জিও ব্যাগ ফেলা না হলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।

সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মন্ডল বলেন, গত দুই বছর ধরেই মন্ডলপাড়া, বিশরশি ও দক্ষিণ শিশুয়া গ্রাম তিনটির পাশ দিয়ে যমুনার ভাঙন চলছে। জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে এবছরের ভাঙনে শত শত পরিবার ও জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

নদী তীরের জীবন এখন অস্থায়ী যমুনার ভাঙনের এই ক্রমবর্ধমান তাণ্ডবে শুধু ভিটেমাটি নয়, হারাচ্ছে পুরো একটি জনপদের স্থায়িত্ব। অনেকে চলে যাচ্ছেন আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউবা নদীর অন্য তীরে নতুন করে ঘর তোলার চেষ্টা করছেন।

তবে আশঙ্কা রয়েই গেছে। প্রতিবছরই এমন চিত্র যদি ফিরে আসে, তবে সাপধরীর মতো আরও কত গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাবে তা ধারণা করা কঠিন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102