মুসলমানদের ইনসাফ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ শাসন এবং ইসলামের সুমহান আদর্শ আলবেনীয়দের মুগ্ধ করে। ফলে দেশটিতে দ্রুত ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয়, ইসলামের প্রথম শতাব্দীতে আলবেনিয়ায় ইসলামের প্রথম পদার্পণ ঘটে। আলবেনিয়ায় ইসলাম প্রচারে মুসলিম বণিক ও ধর্ম প্রচারকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। উসমানীয়দের আগেই আলবেনিয়ায় ইসলাম প্রসারের প্রমাণ হলো বিরাত দুর্গের লাল মসজিদ।
উসমানীয়রা আলবেনিয়ায় বহু সেবামূলক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। তারা রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন শহর নির্মাণ করে। তাদের নির্মিত কয়েকটি শহর হলো শকোদার, এলবাসান, বেরাত, তিরানা (রাজধানী), জিরোকাস্ত্রা, প্রিজরেন, পেজা, জাকোভা ইত্যাদি।
১৯১২ সালে বলকান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আলবেনিয়া ওই বছরের ২৮ নভেম্বর স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯১৩ সালে লন্ডন কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলো আলবেনিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। তবে তারা আলবেনিয়ার দাবীকৃত প্রায় ৮৩ হাজার বর্গকিলোমিটারের পরিবর্তে মাত্র ২৮ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল নির্ধারণ করে। স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে আলবেনীয় মুসলিমদের দুর্দিন শুরু হয়। ১৯২৮ সালে আহমদ জোগো ক্ষমতা গ্রহণ করে। সে ছিল চরম ইসলামবিদ্বেষী। সে মসজিদভিত্তিক দ্বিনি শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং মাদরাসা শিক্ষা নিষিদ্ধ করে। তার পরও আলেমরা ধর্মীয় বই-পুস্তক রচনা অব্যাহত রাখেন। শেখ আলী কারাজা আলবেনীয় ভাষায় কোরআন অনুবাদ করেন, যা ন্যূনতম ইসলামী শিক্ষা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।
১৯৩৯ সালে ইতালি আলবেনিয়া দখল করে। তখন আলবেনিয়া খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সর্বাত্মক চেষ্টা করে। ইতালি সরকার আলবেনিয়ার অসংখ্যা মসজিদ ও মাদরাসা ধ্বংস করে। বিপুলসংখ্যক আলেমকে হত্যা করে। তাদের অনেককে বন্দি এবং অনেককে দেশত্যাগে বাধ্য করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে ইনভার হোক্সার (পূর্ব নাম আনওয়ার পাশা হোক্সা) নেতৃত্বে আলবেনিয়ার কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত। তারা আলবেনিয়াকে বিশ্বের একমাত্র ধর্মহীন দেশ ঘোষণা করে। ইনভার হোক্সার সরকার নির্বিচারে মুসলিম গণহত্যা চালায় এবং মুসলিম জনসাধারণকে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। ১৯৮৯ সালে আলবেনিয়ায় এক গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটে। তখন থেকে মুসলিমরা ধর্ম পালনে কিছুটা স্বাধীনতা লাভ করে। তারা মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণের অনুমতি পায়। তবে দীর্ঘদিনের ইসলামবিদ্বেষী শাসনের ক্ষত এখনো তারা বহন করে যাচ্ছে। মুসলমান ও জনসাধারণের বড় একটি অংশ এখনো ধর্মবিমুখ। আরব দেশগুলোর সহযোগিতায় একাধিক মুসলিম সাহায্য সংস্থা মুসলমানদের ভেতরে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।
সূত্র : ইসলাম ওয়েব ডটনেট, আলুকা ডটনেট ও দাওয়াহ ডট সেন্টার