প্রকৃতিতে কিছু ফুল রয়েছে যেগুলো মানুষের কাছে অস্বস্তিকর গন্ধ ছড়ায়, তবে তাদের এই গন্ধের পেছনে রয়েছে এক অভিনব প্রজনন কৌশল। এই ফুলগুলো পচা মাংসের মতো গন্ধ ছড়িয়ে মাছি ও বিটলসকে আকর্ষণ করে, যারা ফুলে ডিম পাড়ে। এতে ফুলগুলো পরাগায়ন করতে সক্ষম হয় এবং তাদের বংশবৃদ্ধি হয়। এটি প্রকৃতির একটি চমকপ্রদ কৌশল, যা ফুলগুলোর বংশধরদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
এই ফুলগুলোর পচা মাংসের মতো গন্ধের জন্য দায়ী কিছু রাসায়নিক যৌগ। এর মধ্যে রয়েছে-
ডাইমিথাইল ডাইসালফাইড (Dimethyl disulfide): এই যৌগটি রসুনের মতো গন্ধ দেয়।
ডাইমিথাইল ট্রাইসালফাইড (Dimethyl trisulfide): এটি পচা মাংসের গন্ধের কারণ।
আইসোভ্যালেরিক অ্যাসিড (Isovaleric acid): এটি ঘামের মতো গন্ধ সৃষ্টি করে।
ট্রাইমিথাইলামিন (Trimethylamine): এই যৌগটি পচা মাছের গন্ধের জন্য দায়ী।
এই যৌগগুলো ফুলের গন্ধের মূল উৎস, যা মাছি ও বিটলসকে আকর্ষণ করে এবং পরাগায়নে সাহায্য করে।
কিছু ফুল, যেমন অ্যামরফোফ্যালাস টাইটানাম (Amorphophallus titanum), ফুল ফোটানোর আগে নিজেদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘থার্মোজেনেসিস’। ফুলের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা পচনশীল বস্তুতে পোকামাকড়ের উপস্থিতির অনুভূতি দেয় এবং তাদের আকর্ষণ করে।
অ্যামরফোফ্যালাস টাইটানাম (Amorphophallus titanum): এই ফুলটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল হিসেবে পরিচিত এবং পচা মাংসের মতো গন্ধ ছড়ায়।
রাফ্লেসিয়া আর্নল্ডি (Rafflesia arnoldii): এই ফুলটি একক ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং পচা মাংসের মতো গন্ধ ছড়ায়।
স্ট্যাপেলিয়া জিগান্টিয়া (Stapelia gigantea): এই ফুলটি আফ্রিকার মরুভূমিতে জন্মায় এবং পচা মাংসের মতো গন্ধ ছড়ায়।
প্রকৃতির এই অভিনব কৌশল আমাদের প্রজনন প্রক্রিয়ার বৈচিত্র্য ও উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। যদিও এই ফুলগুলোর গন্ধ মানুষের কাছে অস্বস্তিকর, তবে প্রকৃতির চক্রে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।