গুহা! যা প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত ভূগর্ভস্থ ফাঁপা অংশবিশেষ। পাথুরে যুগে অর্থাৎ আদিকালের মানুষদের প্রধান আশ্রয়স্থলই ছিলো গুহা। তবে কালের বিবর্তণের ফলে এসব গুহা হয়ে উঠেছে রহস্যময় ও ভয়ংকর। এমনই একটি গুহা “হ্যাংসন ডুং”, স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে “cave of the mountain river”। এটি ভিয়েতনামের কোং বিন প্রদেশের বো টাচ জেলায় অবস্থিত।
১৯৯১ সালে হো খানহ নামে স্থানীয় এক কৃষক ভেষজের খোঁজ করতে গিয়ে এই গুহাটি আবিষ্কার করেন। দূর্ভাগ্যবশত তিনি গুহার লোকেশন আর মনে করতে পারেন না। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ব্রিটিশ গুহা গবেষণা সংগঠনের প্রধান হাওয়ার্ড ও ডেভ লেমবার্ট এই গুহা নেটওয়ার্কের আয়তন ও প্রশস্ততা পরিমাপ করতে সমীক্ষা শুরু করেন। তাদের গবেষনানুযায়ী, গুহাটির দৈর্ঘ প্রায় ৯ কিমি। গুহাটীর বড় প্রকোষ্ঠটি ২০০ মি লম্বা ও ১৫০ মি চওড়া। ছোট বড় প্রায় ১৫০টি গুহার সমন্বয়ে গঠিত হ্যাংসন ডুং যা কি না পুরো পাথরের দেয়ালে মোড়া এবং বাইরে থেকে আলো প্রবেশ না করায় ভেতরটা ভয়ঙ্কর অন্ধকারে ঢেকে থাকে। তবে গুহাটির আয়তন পরিমাপ করতে পারলেও এর শেষ খুঁজে বের করতে পারেননি তারা।
পরবর্তীতে তারা আবার ২০১০ সালে নিরলস অভিজান চালানোর পর ১৪ই এপ্রিল অবশেষে খুজে পান এতদিন ধরে যার সন্ধান তারা করে আসছিল। সাধারণ মানুষের কাছে প্রথম সন ডুং এর কোনও ছবি প্রকাশ পায়। আবিষ্কারের সাথে সাথেই এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও রহস্যময় গুহা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। কেননা গবেষণা চলাকালীন গুহার মধ্যে দেখতে পান বিষধর সাপ, বড় মাকড়সা, অদ্ভুত সব প্রাণী ও অজানা-অচেনা বৃক্ষরাজি। রয়েছে ছোট ছোট পানির ফোয়ারা। আর সব থেকে অবাক করার বিষয় হচ্ছে সুড়ঙ্গপথ, যে পথ দিয়ে ভিয়েতনামের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে খুব সহজেই চলে যাওয়া যায়।
ব্যতিক্রমর্ধী এ গুহাটি হ্যাংসন ডুং গুহার ভেতরটা আলাদা একটি জগত। যে সব ফটোগ্রাফার এ গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন তারা জানিয়েছেন, গুহার ভেতরে থাকাকালে ভেবেছিলেন তারা পৃথিবী থেকে আলাদা কোনো স্থানে চলে এসেছেন। জার্মানির বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার ক্যারিস্টেন ২০১০ সালে ছবি তোলার জন্য এ গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি গুহা থেকে বাইরে এসে বলেন, তিনি সেখানে দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন, এ সময়ে তিনি সেখানে ঘুমানোর সময় স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতেন, তিনি সর্বদা ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকতেন এবং ভাবতেন তিনি পৃথিবী থেকে আলাদা কোনো স্থানে চলে এসেছেন।