৫ই মে- আজ সেই ভয়াল কালো রাত দিবস। আজ থেকে এক যুগ আগে ১৩ দফা দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলো কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। মহানবী (সঃ) এর সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্য করার শাস্তি হিসেবে একটি ব্লাসফেমি আইন প্রনয়ন এবং প্রকাশ্য নারী পুরুষের অনৈসলামিক মেলামেশা ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষকরা।
সাল ২০১৩, ৫ই মে-ভোর ৫টা! ফজরের নামাযের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়দাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষক ও হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। এরপর হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনুমতির জন্য পুলিশের সাথে আলোচনা শুরু করেন।
ভোরে ঢাকার অভিমুখে হেফাজত ইসলামিরা
বেলা ১১টা, অনুমতির আগেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে বেশ কয়েকটি মিছিল ঢুকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শুধু মোনাজাত করার অনুমতি পায়।
বেলা ১২টা, অভিযোগ পাওয়া যায়, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতা কর্মী হামলা করেছিল।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ জানান, তাদের কার্যালয়ে হামলা হলে তখন তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।
দুপুর দেড়টা, একদিকে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এসে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকারম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ সহিংসতা চলতে থাকে। পুলিশও দফায় দফায় গুলি চালায়। গোটা এলাকা রুপ নেয় রণক্ষেত্রে। বেলা যতই বাড়তে থাকে ততই অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে।
৫ই মে,২০১৩ হেফাজত ইসলামের আন্দোলন
বিএনপি সিনিয়র একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে এ কর্মসূচিকে রাজনৈতিক কোন যোগসূত্র মানতে রাজি নন বিধায় আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি।
রাত সাড়ে দশটা, শাপলা চত্বরের উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের প্রধান শাহ আহমদ শফি রওনা হলে পথিমধ্যে অসুস্থার কারণে ফিরে যান।
রাত ১টা ১৫ মিনিট, পুলিশ, র্যাব,বিজিবির হাজার হাজার সদস্য তখন দৈনিক বাংলার মোড়, দিলখুশা, ফকিরাপুল এবং নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। এদিকে হাত মাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা, অন্যদিকে মঞ্চ থেকে আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য।
মতিঝিলে আশ্রয় নেওয়া হেফাজত কর্মীরা একে একে বেরিয়ে আসে
রাত পৌনে ৩টা, শুরু হয় মুল অভিযান। তিন দিক থেকে ফাকা গুলি,আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা। শত শত রাউন্ড গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। হেফাজতের শত শত কর্মীরা মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেয়। এই যৌথ অভিযানে ১০ মিনিটের মধ্যেই হেফাজত ইসলাম এর কয়েক লক্ষ নেতা-কর্মীকে মতিঝিল থেকে হটিয়ে দেয়া হয়। এভাবে ভোর ৪টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের থেমে থেমে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ অভিযানে মারা যায় অনেকে। তবে ২০২৪ এ মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ২০১৩ সালের ৫ এবং ৬ মে, ৬১ জন নিহত উল্লেখ করে ব্যক্তিদের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে।